ইউসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট কর্তৃপক্ষ ইন্সুরেন্স খাতের ২০ কোম্পানির শেয়ারে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে পুরো পুঁজিবাজারে ছড়িয়ে পড়ে ইন্সুরেন্স খাতের কোম্পানিতে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যে গুজবে সোমবার (১২ অক্টোবর) পুঁজিবাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরফলে আজ ইন্সুরেন্স কোম্পানির শেয়াবে বড় ধরনের দর বিপর্যয় হয়। এদিন বেশিরভাগ ইন্সুরেন্স কোম্পানির শেয়ার ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়ে।
ইউসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের ইন্সুরেন্স খাতের ২০টি কোম্পানির শেয়ারে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত সোমবার সকালেই পুরো পুঁজিবাজারে পৌছে যায়। খবরটি আরও অতিরঞ্জিত হয়ে বাজারে ছড়িয়ে পড়ে। পুরো ইন্সুরেন্স খাতের শেয়ারে বিএসইসি মার্জিন ঋণ নিষিদ্ধ করবে বলে খবর ছড়ায়। যার কোন ভিত্তি নেই।
এদিন ইন্সুরেন্স খাত নিয়ে এমন গুজব বাজারে ছড়ানোর পরেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরী হয়। সবাই সবার ইন্সুরেন্স কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে পুরো ইন্সুরেন্স খাতের শেয়ার ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে। একইসঙ্গে ইন্সুরেন্স খাতের এই আতঙ্ক পুঁজিবাজারের অন্যসব খাতেও প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে গত কয়েকদিন ধরে বাড়তে থাকা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটেও।
ইউসিবি কর্তৃক নন-মার্জিন করা ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো হলো-এশিয়া ইন্সুরেন্স, এশিয়া প্যাসেফিক ইন্সুরেন্স, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্সুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্সুরেন্স, ঢাকা ইন্সুরেন্স, ইস্টল্যান্ড ইন্সুরেন্স, ইসলামিক ইন্সুরেন্স, জনতা ইন্সুরেন্স, কর্ণফুলী ইন্সুরেন্স, নিটোল ইন্সুরেন্স, নর্দান ইন্সুরেন্স, ফিনিক্স ইন্সুরেন্স, পাইওনিয়ার ইন্সুরেন্স, প্রগতি ইন্সুরেন্স, প্রভাতী ইন্সুরেন্স, পূরবী ইন্সুরেন্স, রিলায়েন্স ইন্সুরেন্স, রিপাবলিক ইন্সুরেন্স ও রূপালী ইন্সুরেন্স।
ইউসিবি’র তালিকায় উল্লেখ করা হয়, কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে এই ২০টি ইন্সুরেন্স কোম্পানির শেয়ার নন-মার্জিনেবল করা হয়েছে।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ব্রোকারেজ হাউজটি যদিও তাদের ফোলিওতে থাকা শেয়ার বিক্রির বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করেনি, কিন্তু এ নির্দেশনা প্রেক্ষিতে তাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এছাড়া খবরটি অন্যান্য হাউজে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে গোটা ইন্সুরেন্স খাতের শেয়ারেই এক অনাহুত পেনিক তৈরি হয়। যার কারণে আজ লেনদেনের শুরু থেকে এখাতে বড় সেল প্রেসার দেখা যায়।
ই-মেইলে উল্লেখিত ২০টি ইন্সুরেন্স কোম্পানির নাম ও রোববারের (১১ অক্টোবর) পিই উল্লেখ করা হয়েছে। কোম্পানিগুলোর নাম ও পিই হলো-এশিয়া ইন্সুরেন্স ২৩.৯০, এশিয়া প্যাসেফিক ইন্সুরেন্স ১৮.২০, বাংলাদেশে ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স ২৫.৭০, সেন্ট্রাল ইন্সুরেন্স ২৩.৮০, কন্টিনেন্টাল ইন্সুরেন্স ২৫.৩০, ঢাকা ইন্সুরেন্স ২০.৯০, ইস্টল্যান্ড ইন্সুরেন্স ২৪.২০, ইসলামিক ইন্সুরেন্স ২৬.১০, জনতা ইন্সুরেন্স ২৪.৬০, কর্ণফুলী ইন্সুরেন্স ২৭.৯০, নিটোল ইন্সুরেন্স ১৯.২০, নর্দান ইন্সুরেন্স ২৪.৮০, ফিনিক্স ইন্সুরেন্স ২৬.৬০, পাইওনিয়ার ইন্সুরেন্স ৮.৬০, প্রগতি ইন্সুরেন্স ১২.৮০, প্রভাতী ইন্সুরেন্স ২১.৩০, পূরবী ইন্সুরেন্স ২২.৮০, রিলায়েন্স ইন্সুরেন্স ১২.১০, রিপাবলিক ইন্সুরেন্স ২৫.২০ ও রূপালী ইন্সুরেন্স ১৮.৮০।
এ বিষয়ে ইউসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ রহমত পাশা বলেন, এই ২০টি ইন্সুরেন্স কোম্পানির শেয়ারকে আমাদের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়েছে। তাই আমাদের গ্রাহকদের ঝুঁকি কমানোর জন্য এই শেয়ারগুলোতে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গ্রাহকের ঝুঁকি কমানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তবে কেউ একান্তই এইসব শেয়ারে মার্জিন নিতে চাইলে, তাকে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য বলা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আমরা আমাদের গ্রাহকদের জানিয়েছি।
পিই ৪০-এর নিচের কোম্পানির শেয়ারে ঋণ দেয়ার বিএসইসি’র নির্দেশনা প্রসংগে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, পিই ৪০-এর নিচে থাকলেই ঋণ দিতে হবে-এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। কারণ ঋণ আমরা দিবো। কোন কোন শেয়ারে ঋণ দেবো, কোন কোন শেয়ারে ঋণ দেবো না-সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার আমাদের আমাদের রয়েছে। তবে পিই ৪০-এর বেশি শেয়ারে ঋণ দেয়া যাবে না।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, কমিশন বীমা খাতের শেয়ারে মার্জিন ঋণ বন্ধ করার কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি এবং চিন্তাভাবনাও করেনি। তবে একটি হাউজ মার্জিন দেওয়া, না দেওয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তারা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করলে মার্জিন নাও দিতে পারে। কারণ ওই মার্জিনে গ্রাহকের সঙ্গে সঙ্গে তার অর্থেরও ঝুঁকি আছে। তবে কমিশনের বেঁধে দেওয়া সীমার থেকে বেশি মার্জিন দিতে পারবে না।