প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল সোমবার (১০ আগস্ট) আরও ৬টি কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসের সীমারেখা অতিক্রম করেছে। ওইদিন কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর ফ্লোর প্রাইসের উপরে উঠে আসে। কোম্পানিগুলো হল- অ্যাপেক্স ফুডস, অ্যাপেক্স স্পিনিং, অ্যাপেক্স ট্যানারি, কোহিনূর কেমিক্যাল, এসকে ট্রিমস ও স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক্স লিমিটেড। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে এসকে ট্রিমসের দর বেড়েছে ৩ টাকা ৯০ পয়সা বা ৬.২৭ শতাংশ, অ্যাপেক্স ফুডসের ৫ টাকা ১০ পয়সা বা ৪.২৬ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক্সের ৭ টাকা ৯০ পয়সা বা ২.৩০ শতাংশ, অ্যাপেক্স ট্যানারির ২ টাকা ৩০ পয়সা বা ২.০৮ শতাংশ, কোহিনূর কেমিক্যালের ৩ টাকা ৭০ পয়সা বা ০.৭৮ শতাংশ এবং অ্যাপেক্স স্পিনিংয়ের ৯০ পয়সা বা ০.৬৮ শতাংশ।
গতকাল কোম্পানিগুলোর দর কেবল ঊর্ধ্বগতি ছিল না, লেনদেনের গতিও ছিল শক্তিশালী। গতকাল স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক্স, এসকে ট্রিমস ও এ্যাপেক্স স্পিনিংয়ের লেনদেন ছিল সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের লেনদেন ছিল গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিটির সম্মিলিত শেয়ার ৩০ শতাংশ না থাকার কারণে এর শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ হঠাৎ বেড়েছে।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাংলাদেশে শুরু হয় গত ৮ মার্চ। ওইদিন বাংলাদেশে প্রথম তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য প্রকাশ পায়। এর প্রভাবে ৯ মার্চ পুঁজিবাজারে ভয়াবহ ধস নামে। ওইদিন ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স একদিনে রেকর্ড ২৭৯ পয়েন্ট পড়ে যায়। এরপর দফায় দফায় দরপতন হতে থাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৯ মার্চ থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেনের সময় এক ঘণ্টা কমিয়ে আনা হয়।
এরপরও পতন ঠেকানো না গেলে প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস (দরের সর্বনিম্ন সীমা) নির্ধারণ করে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারের পতন সাময়িকভাবে থামানো হয়।
এক পর্যায়ে করোনাভাইরাসের প্রকোপ সামাল দিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এতে ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকে পুঁজিবাজারের লেনদেন। এর মধ্যেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ দেয়া হয়।
নতুন কমিশন দায়িত্ব নিয়ে পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেয়। কয়েকটি দুর্বল প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বাতিল করে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে অনিয়মের কারণে বেশকিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। এছাড়া, তালিকাভুক্ত ৪২টি কোম্পানির সম্মিলিত শেয়ার ৩০ শতাংশ নেই। কোম্পানিগুলোকে সম্মিলিত শেয়ার ৩০ শতাংশ ধারণ করার জন্য বিএসইসি বাধ্য করছে। সেজন্য আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমাও নির্ধারিত করে দিয়েছে। কোম্পানিগুলোর প্রায় সবগুলোর লেনদেন ও শেয়ার দরে হঠাৎ উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে।
এসব পদক্ষেপের ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে পুঁজিবাজারে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হারানো আস্থা ফিরে আসার স্পষ্ঠ ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ফলে প্রায় দেড় মাস ধরে উর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে পুঁজিবাজার। এতে তালিকাভুক্ত প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর বাড়ছে।
এর মধ্যে ৯ আগস্ট রোববার পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সব থেকে বড় উত্থান হয়েছে। এই উত্থানের পর ১১টি বাদে সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর ফ্লোর প্রাইসের উপরে উঠে আসে।
গতকাল সোমবার পুঁজিবাজারের লেনদেন কিছুটা নেতিবাচক প্রবণতায় শেষ হয়। তারপরও এদিন ফ্লোর প্রাইসের উপরে উঠে আসে অ্যাপেক্স ফুডস, অ্যাপেক্স স্পিনিং, অ্যাপেক্স ট্যানারি, কোহিনূর কেমিক্যাল, এসকে ট্রিমস ও স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক্সের শেয়ার দর।
আরও ৬টি প্রতিষ্ঠান ফ্লোর প্রাইসের সীমারেখায় আটকে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হল-বিডি সার্ভিস, ডেফোডিল কম্পিউটার্স, সী পার্ল হোটেল, ডিবিএইচ ফাস্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইএফআইসি ফাস্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও ট্রাস্ট ব্যাংক ফাস্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড।