পুঁজিবাজারে আসার অপেক্ষায় থাকা সাতটি কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন বাতিল করেছে নতুন কমিশন। গত ১৭ মে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এর পর যোগ দেন আরও তিন কমিশনার। নতুন কমিশন আসার পর বাতিল হওয়া কোম্পানিগুলো হলো-জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফেক্চারিং, বি ব্রাদার্স গার্মেন্টস,বিডি পেইন্টস, বেকা গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল, এসএফ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ,আল ফারুক ব্যাগস,ইনফিনিটি টেকনোলজি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।
সূত্র মতে,সিকিউরিটিজ আইন লংঘন এবং আর্থিক প্রতিবেদনে অংসগতি থাকায় আইপিওগুলো বাতিল করা হয়েছে। তবে কোম্পানিগুলো বাজারে আসতে চাইলে আর্থিক প্রতিবেদন ঠিক করে এবং সিকিউরিটিজ আইন পরিপালন করে আবারও বিএসইসিতে আবেদন করতে পারবে।
বি ব্রাদার্স গার্মেন্টস:
প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চেয়েছিল বি ব্রাদার্স গার্মেন্টস লিমিটেড।সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন এবং তার আর্থিক বিবরণীতে বাড়তি দেখানো, শেয়ার মানি ডিপোজিটের টাকা একটি পৃথক ব্যাংক হিসাবে রাখার কথা থাকলেও সেটি না করে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে রেখেছে। এর ফলে কোম্পানিটি আইপিও আবেদন বাতিল করেছে বিএসইসি।
কমিশন পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে, টেক্সট লাইন ও স্পোর্টসওয়্যার এই দুই ইউনিট থেকে কোম্পানিটির মোট আয়ের ৬৭ শতাংশ আয় আসে। ভবিষ্যতে যদি কোন একটি ইউনিটের ক্রয়াদেশ বাতিল হয় তাহলে কোম্পানিটি সমস্যায় পড়বে। ৩০ জুন, ২০১৬ পর্যন্ত কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীতে কেবলমাত্র একজন পরিচালক স্বাক্ষর করেছেন, যা কোম্পানি আইন ১৯৯৪ লঙ্ঘন হয়েছে।কোম্পানিটির ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্বে রয়েছে শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।
জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফেক্চারিং:
দেশের বহুল আলোচিত গ্রুপ হলো জেএমআই। এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফেক্চারিং লিমিটেড। কোম্পানিটি বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চেয়েছিলো। সিকিউরিটিজ আইন লংঘন ও আর্থিক প্রতিবেদনে অসংগতি থাকায় কোম্পানির আইপিও আবেদন বাতিল করেছে বিএসইসি।
কোম্পানিটির ইস্যু ম্যানেজার আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড ও জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফেক্চারিং লিমিটেড বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওর মাধ্যমে বাজার থেকে ৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করার জন্য গত বছরের ২০ অক্টোবর রোড শো করে। এর পর বিএসইসিতে আবেদন করে।
জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফেক্চারিং লিমিটেডের ৮১ কোটি টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়েছে আইসিবি। এর জন্য প্রিমিয়াম দেওয়ার সাথে সাথে ১১ শতাংশ রিটার্নের নিশ্চয়তা সংক্রান্ত একটি চুক্তি রয়েছে আইসিবি। আইসিবির সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড তার ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে আজ করছে। যা আইন লংঘন।
অন্যদিকে একই গ্রুপের অন্য কোম্পানিতে ১০৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফেক্চারিং লিমিটেড। অথচ কোম্পানিটি বাজার থেকে মাত্র ৭৫ কোটি টাকা নিতে চেয়েছে। এই টাকা ফেরত নিলে কোম্পানির আইপিওতে আসার প্রয়োজন হয় না।
বিডি পেইন্টস:
বিডি পেইন্টস প্রাথমিক গণ প্রস্তাব (আইপিও) ১০ টাকা ইস্যু মূল্যে ২ কোটি শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চেয়েছিলো। উত্তোলন করা অর্থ দিয়ে কোম্পানিটি যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম, নির্মাণ কাজ, অন্যান্য সিভিল ওয়ার্ক এবং আইপিওর খরচ বাবাদ ব্যয় করার কথা ছিলো। আর্থিক প্রতিবেদনে অংসগতি থাকায় কোম্পানির আইপিও আবেদন বাতিল করেছে বিএসইসি।
বেকা গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল
পুঁজিবাজার থেকে ৩৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চেয়েছিলো বেকা গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড। কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে অসংগতি পাওয়ায় আবেদন বাতিল করেছে কমিশন। কমিশন আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখে তারা কোম্পানির সম্পদ এবং আয় অতিরিক্ত দেখিয়েছে। কোম্পারিটির ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানজেমেন্ট এবং বিডি ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল হোল্ডিংস লিমিটেড।
এসএফ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ
এসএফ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পুঁজিবাজার থেকে ১৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চেয়েছিলো। কোম্পানিটির ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে ছিলো এনবিএল ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইক্যুইটি ম্যানজেমেন্ট এবং সন্ধানী লাইফ ফিন্যান্স লিমিটেড।
আল-ফারুক ব্যাগস:
পুঁজিবাজারে আসার জন্য ২০১৮ সালের ১লা জুলাই বিএসইসিতে আবেদন করা আল ফারুক ব্যাগস। কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে ৩ কোটি শেয়ার ছেড়ে ৩০ কোটি টাকা তুলতে চেয়েছিলো। কোম্পানির মূল ব্যবসা হলো বিভিন্ন ধরণের পিপি ওভেন ব্যাগ, লাইনার, গার্মেন্টস পলি তৈরি এবং এগুলো রফতানি করা। ইস্যু ম্যানেজার বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্ট ও আইআইডিএফসি ক্যাপিটাল।
আইপিওর টাকা দিয়ে কোম্পানিটি মূলধন দিয়ে যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সংগ্রহ ক্রয়, ভবন নির্মাণ এবং ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে চেয়েছিলো। পাবলিক ইস্যু রুলস পরিপালন না করায় আইপিওটি বাতিল করেছে বিএসইসি।
ইনফিনিটি টেকনোলজি:
পুঁজিবাজারে আসার জন্য ২০১৮ সালের ১২এপ্রিল বিএসইসিতে আবেদন করা ইনফিনিটি টেকনোলজি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে ৩ কোটি শেয়ার ছেড়ে ৩০ কোটি টাকা তুলতে চেয়েছিলো। এই টাকা দিয়ে অবকাঠামো এবং সফ্টওয়্যার উন্নয়নে ব্যয় করার কথা ছিলো।
ইনফিনিটি টেকনোলজি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কোম্পানিটি বৃহৎ ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সলিউশন, বিশেষত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আইটি সেবা প্রদানকারী একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও কোম্পানিটি স্থানীয়ভাবে এবং বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধরণের প্রকৌশলগত এবং অ্যাপ্লিকেশনের কাজ করে। ইনফিনিটি টেকনোলজির ইস্যু ম্যানেজার ছিলো আইআইডিএফসি ক্যাপিটাল।