বিদায়ী সপ্তাহে বাতিলের খাতায় যোগ হয়েছে আরও এক লাখ ১১ হাজার বিও অ্যাকাউন্ট। এর আগে বাতিল হয় ৮৪ হাজার বিও। অর্থাৎ এ বছর মোট বাতিল বা বন্ধ হয়ে যাওয়া বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৯৫ হাজার, যা আগের বছরের চেয়ে দুই হাজার বেশি। আগের বছর এই সময়ে বাতিল হয়েছিল এক লাখ ৯৩ হাজার বিও অ্যাকাউন্ট।
সাধারণত ৩০ জুন পর্যন্ত বিও অ্যাকাউন্ট নবায়ন করার সুযোগ থাকে। কিন্তু বিও হিসাবধারীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে বেশিরভাগ ব্রোকারেজ হাউসই জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই সুযোগ রাখে। এর পরই সিডিবিএলে বাতিল বিওর হিসাব দেওয়া লাগে। এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে বেশিরভাগ হাউসই বিনিয়োগকারীদের জন্য অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু এতে কোনো সাড়া মেলেনি, যে কারণে শেষ সময়ে এসে বন্ধ বিও হিসাব দিয়েছে অনেক হাউস কর্তৃপক্ষ। এজন্য সপ্তাহের ব্যবধানে বাতিল বিওর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গেছে।
জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির জন্য এ বছর বিনিয়োগকারীদের হাউসে উপস্থিতি কম। এজন্য যেসব বিওতে শেয়ার অথবা নগদ টাকা নেই, সেসব হিসাব নবায়ন করার কথা ভাবেননি তারা, যে কারণে অনেক বিও বাতিল হয়েছে। ব্রোকারেজ হাউস কর্তৃপক্ষ জানায়, এ বছর বাতিল বিওর সংখ্যা আরও বাড়তে পারত। সামনে রবির আইপিও অনুমোদনের সম্ভাবনার পাশাপাশি ওয়ালটনের আইপিও রয়েছে, যে কারণে ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও অনেকে বিও নবায়ন করেছেন।
স্মরণকালের (২০১০ সালের) ভয়াবহ ধসের পর আর স্বরূপে ফিরতে পারেনি পুঁজিবাজার। মাঝেমধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও আবারও পতনের ধাক্কা লেগেছে বাজারে। ফলে বাজারবিমুখ হয়ে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা, যার ধারাবাহিক ধাক্কা লেগেছে বিও অ্যাকাউন্টে।
এ নিয়ে গত ছয় বছরে নবায়ন না করায় বন্ধ হয়ে গেছে আট লাখের বেশি বিও অ্যাকাউন্ট। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী কোম্পানি সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৪-১৫ সালের অর্থবছর শেষে মোট বিও’র সংখ্যা ছিল ৩২ লাখ চার হাজার ৬০২টি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ২৩ লাখ ৯৫ হাজার ৮৪টিতে।
জানা যায়, অন্যসব বছরের মতো এবারও যেসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই প্রাইমারি মার্কেট বা আইপিওতে আবেদনধারী বিও। এছাড়া সেকেন্ডারি মার্কেটে সুবিধা করতে না পেরে পুঁজিবাজার ছেড়ে গেছেন কিছু বিনিয়োগকারী। আবার অনেক স্বল্পসংখ্যক শেয়ারধারীও অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন।
জানতে চাইলে এ ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, প্রতিবছরই নবায়ন না করার ফলে যেসব বিও বাতিল হয়, তার বেশিরভাগই প্রাইমারি মার্কেটের শেয়ারে আবেদন করার জন্য খোলা বিও অ্যাকাউন্ট। আমার মনে হয় এ বছরও তা-ই হয়েছে। তবে প্রাইমারি মার্কেটের পাশাপাশি সেকেন্ডারি মার্কেট ভালো হলে আবারও বিও খোলার সংখ্যা বাড়বে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতি বছর প্রধানত দুই কারণে অসংখ্য বিও বাতিল হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বাজারের মন্দা পরিস্থিতি, অন্যটি প্রাইমারি মার্কেট থেকে বিনিয়োগকারীদের সুবিধা না পাওয়া।
নিয়মানুযায়ী জুনে বিও ফি পরিশোধ না করলে সেসব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব হিসাবে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে, সেসব হিসাব বন্ধ হয় না। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিযোগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এ ফি জমা নেওয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুনে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময়ে বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।