পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য এ পর্যন্ত ১৩ ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে কারা কত টাকা বিনিয়োগ করেছে বিএসইসিতে সে রিপোর্টও পাঠাচ্ছে তারা।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এই তথ্য জানিয়েছেন।
আজ শনিবার (১৮ জুলাই) পুঁজিবাজারে করোনাভাইরাসের প্রভাব ও উত্তরণের উপায় সম্পর্কিত রিসার্জেন্ট ডায়ালগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ এর উদ্যোগে গঠিত রিসার্জেন্ট বাংলাদেশ এই ডায়ালগের আয়োজন করে।
ডায়ালগে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বাকী ব্যাংকগুলোর তহবিল গঠনের বিষয়ে চারদিক থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সহযোগিতা চাওয়া হবে।
বিশেষ তহবিল গঠনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা প্রজ্ঞাপনের কিছু শর্তের কারণে বিনিয়োগ ব্যাহত হতে পারে জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, এসব শর্তের বিষয় পুনঃবিবেচনা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ব্যাপারে ব্যাংকের পাশাপাশি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তারল্য সুবিধা বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান বিএসইসি চেয়ারম্যান। এছাড়া আইসিবিকে স্বল্প সুদের তহবিল সুবিধা দেওয়ার জন্যেও অনুরোধ জানাবেন, যাতে তারা পুঁজিবাজারে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।
ডায়ালগটি সঞ্চালনা করেন এমসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন-উর-রশিদ।
আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ছানাউল হক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি) এর প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরী, বিল্ড চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন, আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মামমুদ, মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান, এমসিসিআই’র সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন, পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম প্রমুখ।
ডায়ালগে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, তারা পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও অটোমেশনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন। অটোমেশন হয়ে গেলে ব্যবসা সহজ হবে, স্টেকহোল্ডারদের সময় ও খরচ বাঁচবে। বাজারে আরও স্বচ্ছতা এবং সুশাসন আসবে। বাজারের পরিধি প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব হবে। সব মিলিয়ে দুই বছর পর একটি গতিশীল বাজার দেখা যাবে।
তিনি স্বীকার করেন, গত কয়েক বছরে বাজারে যেসব কোম্পানির আইপিও এসেছে সেগুলোর বেশিরভাগেরই মৌলভিত্তি ভাল নয়। অনেক কোম্পানি জাল কাগজপত্র বিএসইসিতে জমা দিয়ে আইপিও পাশ করিয়ে নিয়েছে। বিএসইসি এসব কাগজপত্রের উপর বিশ্বাস করেছে বলে তাদের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি সঠিক হয়নি, অনেক ভুল হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা চিহ্নিত করে শাস্তির মুখোমুখী করা হচ্ছে যাতে নতুন করে কেউ এমন কাজের সাহস না দেখায়।
তিনি এ ধরনের প্রবনতা বন্ধে নিরীক্ষা প্রতিবেদনের মানের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
বাজারে লেনদেন বাড়াতে সিএসইর চেয়ারম্যান স্ক্রিপ নেটিং এর সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবটি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার আশ্বাস দেন তিনি।
বহুল আলোচিত বাইব্যাক পদ্ধতি চালুর জন্য কোম্পানি আইনে সংশোধনের সময় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এই বাজারের উন্নয়ন হলে কোম্পানিগুলোকে দীর্ঘ মেয়াদী অর্থায়নের জন্য আর ব্যাংকের উপর এতটা নির্ভর করতে হবে না। ব্যাংকের উপর থেকে চাপ কমবে। স্বল্প মেয়াদের আমানত নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদের অর্থায়নজনিত সমস্যা অনেকটাই কেটে যাবে।