বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রস্তাবিত ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট বা ট্রেক বিধিমালায় বা ব্রোকারেজ হাউজ বিধিমালায় চারটি পরিবর্তনের বিষয়ে মতামত দিয়েছে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ। গত ২৩ জুন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন- বিএসইসি তাদের ওয়েবসেইটে খসড়া ‘ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট বিধিমালা, ২০২০’ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্টদের মতামত আহ্বান করে। এর প্রক্ষিতে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ তাদের মতামত দিয়েছে।
ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবসা করতে গেলে যে আইনগত অধিকারের প্রয়োজন হয় সেটি হচ্ছে ট্রেডিং রাইট। এই ট্রেডিং রাইট কে, কিভাবে পাবে সে বিষয়টি আছে ‘ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট বিধিমালা, ২০২০’ এ ।
স্টক এক্সচেঞ্জগুলো ডিমিউচুয়ালাইজড হওয়ার আগে অর্থাত্ ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা পৃথক হওয়ার আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সদস্যরা ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবসা করতে পারতেন।
যেহেতু ডিমিউচুয়ালাইজেশনের আগে ব্রোকাররাই ছিলেন স্টক এক্সচেঞ্জের মালিক, মালিকানা আলাদা হওয়ার পর ব্রোকারদের ব্যবসার জন্য অর্থাৎ ট্রেডিং রাইটের জন্য আলাদা আইন করা দরকার হয়ে পড়ে। সেই পরিপ্রেক্ষিতিই এই আইন করে বিএসইসি।
এটি পাস হলে আগের চেয়ে কম টাকায় নতুন ব্রোকারেজ হাউজ খোলার সুযোগ হবে। বর্তমানে যারা ব্রোকার তারা স্টক এক্সচেঞ্জ শেয়ার হোল্ডার। এই আইন পাস হলে স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার হোল্ডারদের বাইরের কেউ আইন মেনে ট্রেডিং রাইট পাওয়ার জন্য বা ব্রোকারেজ ব্যবসার জন্য আবেদন করতে পারবে।
যেসব পরিবর্তন চেয়েছে ডিএসই
খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, একজন ট্রেক হোল্ডারের ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে তিন কোটি টাকা।
ডিএসই ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন বাড়িয়ে ১০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
এছাড়া ট্রেক হোল্ডারের নিবন্ধন ফি পাঁচ লাখ টাকা, নিরাপত্তা জামানত দুই কোটি টাকা, নতুন ট্রেক হোল্ডারের আবেদনের জন্য এক লাখ টাকা ফি’র কথা বলা হয়েছে বিধিমালায়।
ডিএসই নিবন্ধন ফি পাঁচ কোটি টাকা (অফেরতযোগ্য), নিরাপত্তা জামানত পাঁচ কোটি টাকা, নতুন ট্রেক হোল্ডারের আবেদনের জন্য ১০ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে।
ডিএসই পরিচালনা পর্ষদ বলছে, পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এই পরিবর্তন চাচ্ছে তারা, যাতে কোনো ব্রোকারেজ হাউজ গ্রাহকের সাথে প্রতারণা করতে না পারে।
কিছুদিন আগে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই অফিস গুটিয়ে পালিয়ে যান ব্রোকারেজ হাউজ ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এতে বিপাকে পড়েন ওই ব্রোকারেজ হাউজের গ্রাহকরা। সঙ্কটকালে তাদের শেয়ার ও অর্থ আটকে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন তারা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সর্বশেষ আমাদের যে দুটি ব্রোকার লাইসেন্স বিক্রি হয়েছে সেটির একটির দাম ছিল ২৫ কোটি এবং একটির দাম ছিল ২৮ কোটি টাকা।
“২০১০ সাল হলে একটি ব্রোকারের লাইসেন্স নিতে হতো ১২০ কোটি টাকায়। সে হিসেবে ট্রেডিং রাইট বা একটি ট্রেকের দাম অনেক হওয়ার কথা। এই আইন পাস হলে মানুষ অনেক কমে ট্রেডিং রাইট কিনে ব্রোকার ব্যবসা শুরু করতে পারবে।”
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, “এটি পাস হলে নতুন এবং পুরনো সব ট্রেক হোল্ডারকে এই আইনের আওতায় আসতে হবে।”