1. [email protected] : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারবার্তা : nayan শেয়ারবার্তা
  3. [email protected] : news uploder : news uploder
১৪ ব্রোকারহাউজ গ্রাহকদের জমাকৃত টাকার একাংশ হাওয়া করে দিয়েছে
বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২২ এএম

১৪ ব্রোকারহাউজ গ্রাহকদের জমাকৃত টাকার একাংশ হাওয়া করে দিয়েছে

  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ৯ জুলাই, ২০২০
brokerage-house-bd

প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ১৪টি ব্রোকারহাউজ তাদের গ্রাহকদের জমাকৃত টাকার একাংশ হাওয়া করে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্রাহকদের যে পরিমাণ টাকা থাকার কথা ছিল, বাস্তবে তার চেয়ে ৪৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা কম রয়েছে। এর অর্থ গ্রাহকদের প্রায় ৪৭ কোটি টাকা চলে গেছে ব্রোকারহাউজের মালিকদের পকেটে। ডিএসই সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

ডিএসইর কাছে প্রেরিত ব্রোকারহাউজগুলোর হিসাব থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ কেলেঙ্কারির পর ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের নির্দেশে ডিএসই ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ব্রোকারেজ হাউজগুলোর কাছে গ্রাহকদের সমন্বিত হিসাবের (Consolidated Accounts) তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায়। ব্রোকারেজ হাউজগুলোর পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার (৮ জুলাই) অনুষ্ঠিত ডিএসইর পরিচালনা পষর্দের বৈঠকে ভয়াবহ এ তথ্য উঠে এসেছে।

ব্রোকারহাউজগুলোর মধ্যে দেশের কয়েকটি শীর্ষ শিল্প গ্রুপের প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। গ্রুপগুলোর মধ্যে আছে-এ্যাপেক্স গ্রুপ, সিনহা গ্রুপ, ল্যাব এইড গ্রুপ ও ডোরিন গ্রুপ। এর মধ্যে ল্যাবএইড ছাড়া বাকী তিনটি গ্রুপের একটি করে কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে।

বৃধবারের বৈঠকে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ ব্রোকারহাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার পরিচালক-সবাই একমত হয়েছেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থকে সবচেয়ে অগ্রাধিকার ও তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখার ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের মতো আর একটি ঘটনাও যাতে না ঘটে যে কোনো মূল্যে এটি নিশ্চিত করতে হবে। ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মোঃ রকিবুর রহমান এই ইস্যুতে অনেক বেশি সোচ্চার ছিলেন বলে জানা গেছে। শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মোঃ শাকিল রিজভী এবং অপর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মোহাম্মদ শাজাহান তাকে সমর্থন দেন। এমনকি স্বতন্ত্র পরিচালকরাও ব্রোকারহাউজসহ পুঁজিবাজারের সব ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি রোধ, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে সিরিয়াস অবস্থান নেন।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ডিএসইর ম্যানেজমেন্ট অবিলম্বে আলোচিত ব্রোকারহাউজগুলোকে গ্রাহকদের টাকা সমন্বিত হিসাবে ফিরিয়ে দিতে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়ে চিঠি দেবে। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে গ্রাহকদের টাকা অ্যাকাউন্টে জমা করা না হলে বিদ্যমান আইনে ডিএসই খেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবে।

জানা গেছে, গ্রাহকদের সমন্বিত হিসাবে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে অ্যাপেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্স ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে। ঘাটতির পরিমাণ ২১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। গ্রাহকদের এই পরিমাণ টাকা তারা অন্য হিসাবে সরিয়ে নিয়েছে অথবা ভেঙ্গে খেয়েছে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা ঘাটতি সিনহা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সিনহা সিউকিরিটিজে।

নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন ক্যাপিটালের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজে ঘাটতির পরিমাণ ৬ কোটি ৯ লাখ টাকা।

এক্সপো ট্রেডার্স নামের ব্রোকারহাউজে গ্রাহকদের সমন্বিত হিসাবে ৫ কোটি ৩ লাখ টাকা ঘাটতি আছে।

শীর্ষ পাঁচ খেলাপি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা সাদ সিকিউরিটিজে ঘাটতির পরিমাণ ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

বাকী ৯ ব্রোকারহাউজে সর্বনিম্ন ৪ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘাটতি আছে।

এই ব্রোকারহাউজগুলোর মধ্যে আছে- ল্যাব এইড গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মিরর ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ডোরিন গ্রুপের মালিকানাধীন ব্রোকারহাউজ নুর-ই-আলম সিদ্দিকী অ্যান্ড কোং, ফারইস্ট স্টক এন্ড বন্ডস, এএনএফ ম্যানেজমেন্ট, এসিই ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস, হাবিবুর রহমান সিকিউরিটিজ ও গেটওয়ে ইক্যুইটি রিসোর্সেস লিমিটেড।

উল্লেখ, গত ২২ জুন ডিএসইর সদস্য প্রতিষ্ঠান ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শহীদুল্লাহ, তার স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানের পরিচালক নিপা সুলতানা ব্রোকারহাউজটির সব অফিস বন্ধ করে দিয়ে গা দেয়। গত ৬ জুলাই পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ডিবি তাদেরকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা গ্রাহকদের ১৮ কোটি টাকা আত্মাসাত করার কথা স্বীকার করে।

ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের ঘটনায় অনেক দিন পর ডিএসই গা ঝাড়া দিয়ে উঠে। সব ব্রোকারহাউজের কাছে চিঠি দিয়ে সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের তথ্য জানতে চায়। আর তাতেই থলের বেড়াল বের হয়ে আসে।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ ডিএসই আগে থেকে ব্রোকারহাউজগুলো নিয়মিত পরিদর্শন (Inspection) করলে হয়তো ব্রোকারহাউজগুলো গ্রাহকদের এত টাকা সরাতে পারতো না। পাশাপাশি ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের আগেও শাহ মোহাম্মদ সগীরসহ যে কেলেঙ্কারিগুলো হয়েছে, সেগুলো এড়ানো যেত। তবে আগে যা-ই হোক, বর্তমানে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ এ বিষয়ে অনেক কঠোর অবস্থানে।

বুধবারের (৭৮ জুলাই) পর্ষদ সভায় সব পরিচালকই বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার ছিলেন বলে জানা গেছে। ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালকদের বিরুদ্ধে অনেকদিন ধরে নামকাওয়াস্তে পর্ষদ সভায় যোগ দেওয়ার অভিযোগ ছিল। জানা গেছে, বুধবারের সভায় অনিয়মকারী ব্রোকারহাউজগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সুরক্ষা, বাজারের স্বচ্ছতা ও সুশাসনসহ বাজার উন্নয়নের নানা ইস্যুতে তারা বিস্তারিত আলোচনা করেন। শেয়ারহোল্ডার পরিচালকরা তাদের সমর্থন করেন। বাজারের উন্নয়নে এই সমন্বয় ও সমঝোতা আগামী দিনেও বজায় থাকলে সংকট কাটিয়ে বাজার নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে।

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:

ভালো লাগলে শেয়ার করবেন...

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ