পুঁজিবাজারে অনেকেই নিজেদের ব্যক্তিগত ও তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কথা ভেবে ফ্লোর প্রাইসের (দর কমার সর্বনিম্ন সীমা) বিরোধীতা করেছেন। উপেক্ষা করেছেন সাধারন বিনিয়োগকারীদের কথা। তবে সেই ফ্লোর প্রাইসের মধ্যেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়তে শুরু করেছে। এতে করে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ রক্ষা পেয়েছে এবং বাজার স্বাভাবিক গতির দিকে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
অনেকের সমালোচনা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ফ্লোর প্রাইসের নির্দেশনার পক্ষে অনড় রয়েছেন। এমনকি কোন কোন কমিশনারের আপত্তিকেও তিনি পাত্তা দেননি। অন্যথায় ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হতে পারত বর্তমান কমিশনের জন্য আত্মঘাতি। এই সিদ্ধান্ত নিলে বাজারের পতন সামলানো কমিশনের জন্য কঠিন হয়ে পড়তো। যা পুঁজিবাজারের ২০১০-১১ ইতিহাসের আরেকটি পূণরাবৃত্তি করতে পারত।
এই ফ্লোর প্রাইসের নির্দেশনার মধ্যেই গত কয়েকদিন ধরে মূল মার্কেটে লেনদেন বাড়ছে। যা কয়েকদিনের ব্যবধানে বাড়তে বাড়তে বুধবার (০৮ জুলাই) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন ২০০ কোটির ঘরে চলে এসেছে। এছাড়া এদিন মূল্যসূচকেরও বড় উত্থান হয়েছে।
মূল মার্কেটে লেনদেনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে মূলত গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের মালিকানা পরিবর্তন। ওই কোম্পানিটির মূল মালিকানা পরিবর্তনে গত ২৮ জুন ব্লকে বড় লেনদেন হয়। যা মূল মার্কেটেও বিনিয়োগকারীদেরকে আকৃষ্ট করে। এরপর থেকেই নিয়মিত লেনদেন বাড়ছে। এর মাধ্যমে গত ৮ কার্যদিবসে মূল মার্কেটে গড়ে প্রতি কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে ৯৭ কোটি টাকা। যার পরিমাণ এর আগের ৫ কার্যদিবসে গড়ে ছিল ৪৪ কোটি টাকা।
নিম্নে গত ৮ কার্যদিবসে ডিএসইর লেনদেনের তথ্য তুলে ধরা হল-
তারিখ | মোট লেনদেন (কোটি টাকা) | ব্লকে লেনদেন (কোটি টাকা) | মূল মার্কেটে লেনদেন (কোটি টাকা) |
৮ জুলাই | ২৩১.০৬ | ২৮.৭৪ | ২০২.৩২ |
৭ জুলাই | ১৩৮.৫৭ | ২৬.৬৪ | ১১১.৯৩ |
৬ জুলাই | ১৫০.০৬ | ৫৭.৮০ | ৯২.২৬ |
৫ জুলাই | ৭৩.৪১ | ৮.৪৯ | ৬৪.৯২ |
২ জুলাই | ৮১.১৯ | ১৪.৮৯ | ৬৬.৩০ |
৩০ জুন | ৫৫৫.৭২ | ৪৬৭.৭৬ | ৮৭.৯৬ |
২৯ জুন | ১৫৪.৬৬ | ৬৯.২০ | ৮৫.৪৬ |
২৮ জুন | ২৫৪৩.২৬ | ২৪৭৯.২৬ | ৬৪ |
অথচ ফ্লোর প্রাইসের নির্দেশনাটি নতুন কমিশন প্রত্যাহার করে নিলে পুঁজিবাজারে ভয়াবহ মন্দাবস্থার তৈরী হতে পারত। যা ব্লকে ১০ শতাংশ কমে লেনদেনের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমেই প্রমাণিত। এই মার্কেটে ছাড় দেওয়ায় অনেক কোম্পানির শেয়ার দর ১০ শতাংশ কমে লেনদেন হচ্ছে। এ হিসেবে ফ্লোর প্রাইস না থাকলে মূল্যসূচক স্বাভাবিকভাবেই প্রায় ১০ শতাংশ বা ৪০০ পয়েন্ট কমে ৩৬০০ পয়েন্টে নেমে আসত। এরপরেও যে কত কমত, তা বোধগম্য না। তবে পতন যে ৪০০ পয়েন্টেই সীমাবদ্ধ থাকতো না, সেটা নিশ্চিত।
এমন পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তৈরী হতো আতঙ্ক। যাতে বাড়ত বিক্রির চাপ। একইসঙ্গে মার্জিণ ঋণের কারনে শুরু হতো ফোর্সড সেল। যাতে করে সূচকের পতন কোথায় গিয়ে ঠেকত, তা উপলব্ধি করা কঠিন। এ কারনেই হয়তো বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ফ্লোর প্রাইসের ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থানে। তিনি কোনভাবেই বর্তমান পরিস্থিতিতে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পক্ষে না।
নিম্নে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের মূল মালিকানায় পরিবর্তনের আগের ৫ কার্যদিবসে ডিএসইর লেনদেনের তথ্য তুলে ধরা হল-
তারিখ | মোট লেনদেন (কোটি টাকা) | ব্লকে লেনদেন (কোটি টাকা) | মূল মার্কেটে লেনদেন (কোটি টাকা) |
২৫ জুন | ৬৮.৩৬ | ২২.৪৫ | ৪৫.৯১ |
২৪ জুন | ৫৪.১৪ | ১০.২৮ | ৪৩.৮৬ |
২৩ জুন | ৭১.৯৭ | ১৮.৩৩ | ৫৩.৬৪ |
২২ জুন | ৫১.২৭ | ৫.৬৪ | ৪৫.৬৩ |
২১ জুন | ৩৮.৬২ | ৮.২১ | ৩০.৪১ |
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস মহামারিতে পুঁজিবাজারে অনেক পতন হয়। এতে করে শেয়ার দর অবমূল্যায়িত হয়ে যায়। কিন্তু তারপরেও অযৌক্তিকভাবে পতন অব্যাহত ছিল। যা রোধে গত ১৯ মার্চ বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন শেয়ার দর পতনের সীমা ঠিক করে নির্দেশনা দেয়।
বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়, ১৯ মার্চ যেকোন কোম্পানির শেয়ার লেনদেন শুরু হবে এর আগের ৫ কার্যদিবসের গড় ক্লোজিং দর দিয়ে। আর ওই দরের নিচে শেয়ারের দাম নামতে পারবে না। তবে দাম বাড়ার সীমা অপরিবর্তিত থাকবে।