২০১৮-১৯ অর্থবছরের ব্যবসায় মুনাফা অর্জন করা সত্ত্বেও ৭ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা যেমন ক্ষিপ্ত, একইভাবে মেনে নিতে পারছেন না বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাই কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিনিয়োগকারীরা।
জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর সম্প্রতি আয়োজিত লভ্যাংশ সংক্রান্ত সভায় ৭ কোম্পানির পর্ষদ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
লভ্যাংশ দেবে না এ তালিকায় রপ্তানিতে স্বর্ণ ট্রফি জয়ীর মতো কোম্পানিও রয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রাধীন কোম্পানি ও কয়েক বছর আগে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিও রয়েছে। এমনকি রাইট ইস্যুর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ এখনো ব্যবহার করতে না পারা কোম্পানিও আছে।
মুনাফা সত্ত্বেও লভ্যাংশ না দেওয়া কোম্পানিগুলো নিয়ে বিনিয়োগকারীদের নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তারা কোম্পানিগুলোর পর্ষদের এ সিদ্ধান্তকে অমানবিক ও শেয়ারবাজার বিরোধী আচরন বলে দাবি করেছে। একইসঙ্গে মুনাফা সত্ত্বেও লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি ছায়েদুর রহমান বিজনেস আওয়ারকে বলেন, একটি কোম্পানির মুনাফা হলে লভ্যাংশ দেওয়া উচিত। আর শেয়ারবাজারের বর্তমান অবস্থায় সেটা আরও বেশি দাবি রাখে। তাই শেয়ারবাজারের স্বার্থে ওইসব কোম্পানির পর্ষদের লভ্যাংশ ঘোষণা করা উচিত ছিল।
লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া কোম্পানিগুলোর নাম, শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ও শেয়ার দর তুলে ধরা হল-
এ বিষয়ে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের সচিব তপন কুমার সরকার বিজনেস আওয়ারকে বলেন, এবার লভ্যাংশ দিতে পারিনি। কারন নগদ টাকা নাই। বোনাস দিতে পারতেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেটা দিলে তো ঝামেলা। কিন্তু এর আগেতো নিয়মিত বোনাস দিয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি কোন উত্তর দেননি।
খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ : ২০১৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এ কোম্পানিটি গত বছর ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।এবারও কোম্পানিটির ২ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা ছিল। এছাড়া উদ্যোক্তা/পরিচালকদের শেয়ার ধারন ৩০ শতাংশের উপরে থাকায় বোনাস শেয়ারে বাধা ছিল না। তারপরেও তালিকাভুক্তির মাত্র ৫ বছরে কোম্পানিটির পর্ষদ লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কোম্পানিটিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নিয়ে গেল। হতাশ করল বিনিয়োগকারীদেরকে।
রেনউইক যজ্ঞেশ্বর : এ কোম্পানিটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ব্যবসায় ৪২ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে। কিন্তু তারপরেও একটি রাষ্ট্রাধীন কোম্পানি হয়ে বেসরকারী কোম্পানির ন্যায় আচরন করেছে। এতে হতাশ হয়েছে বিনিয়োগকারীরা। যা ছিল অপ্রত্যাশিত।
শাইনপুকুর সিরামিকস : বেক্সিমকো গ্রুপের এ কোম্পানিটির পর্ষদ ২০১৩ সাল থেকে শেয়ারহোল্ডারদের কোন লভ্যাংশ দিচ্ছে না। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কোম্পানিটি ৪ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করলেও পর্ষদ তা দিতে রাজি না। তাই ‘জেড’ ক্যাটাগরিতেই থাকতে হবে এ কোম্পানিকে।
ইনটেক : ২০০২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি আগের অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের ১১ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছিল। এ কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরে প্রতিবারই বোনাস শেয়ার দিয়েছে। কখনো নগদ লভ্যাংশ দেয়নি। তবে বর্তমানে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা/পরিচালকদের শেয়ারধারন ৩.৯৭ শতাংশ হওয়ার কারনে বোনাস শেয়ার দেওয়ার সুযোগ নেই। আর তাতেই প্রথমবার শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পর্ষদ।
জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন : ২০১২ সালে তালিকাভুক্তির পরে ২০১৪ সালে ৩টি সাধারন শেয়ারের বিপরীতে ২টি রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা কোম্পানিটির ব্যবসায় এখন মন্দা। এছাড়া তালিকাভুক্তির পরে প্রতিবছরই বোনাস শেয়ার দিয়ে পরিশোধিত মূলধন প্রায় ৫০০ কোটিতে উন্নিত করা হয়েছে। তারপরেও কোম্পানিটির পর্ষদ এবার মুনাফা সত্ত্বেও লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উদ্যোক্তা/পরিচালকদের শেয়ার ধারন মাত্র ১৩.৮২ শতাংশ হওয়ায় নগদ লভ্যাংশ বাধ্যতামূলক ছিল। আর তাতেই বেরিয়ে এসেছে কোম্পানির প্রকৃত চিত্র।
সালভো কেমিক্যাল : এ কোম্পানিটির পর্ষদও কখনো শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দেয়নি। শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার দিয়ে এসেছে। কিন্তু এবার উদ্যোক্তা/পরিচালকদের শেয়ার ধারন ৩০ শতাংশের নিচে (২২.১৪%) হওয়ায় বোনাস শেয়ার দেওয়ার সক্ষমতা হারিয়েছে। আর তাতেই পর্ষদ লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম : ১৯৯০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানির নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সংখ্যা মাত্র ১ বছর। এরমধ্যে আবার কোম্পানিটির উদ্যোক্তা/পরিচালকদের শেয়ারধারন ৩০ শতাংশের নিচে (২৮.৩৮%) হওয়ায় বোনাস শেয়ার দেওয়ার সক্ষমতা হারিয়েছে। তাতেই কপাল পুড়েছে শেয়ারহোল্ডারদের। অথচ এই কোম্পানিটি ২০১৬ সালে রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৫২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছে। যে অর্থ এখন পর্যন্ত ব্যবহার সম্পন্ন হয়নি।
শেয়ারবার্তা / আনিস