পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২৫ ব্যাংক থেকে শেয়ারহোল্ডারদের ২ হাজার ২৬৫ কোটি টাকার নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হবে। এরইমধ্যে ব্যাংকগুলোর পর্ষদ সভায় এই লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। যা ব্যাংকগুলোর বার্ষিক সাধারন সভা (এজিএম) অনুমোদন শেষে বিতরন করা হবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও ব্যাংকগুলোর আর্থিক হিসাব বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
পুঁজিবাজারের চলমান তারল্য সংকটের মধ্যে ব্যাংকগুলোর এই বিশাল নগদ লভ্যাংশ বড় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। যা খুবই দরকার ছিল।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, চলমান সংকটের সময় ব্যাংকের এই নগদ লভ্যাংশ খুবই ইতিবাচক খবর। এটার খুবই দরকার ছিল। ব্যাংকগুলোর নগদ লভ্যাংশে বাজারে গতি তৈরী হবে বলে তিনি মনে করছেন।
দেখা গেছে,পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ২৫টি ব্যাংকের পর্ষদ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এই ব্যাংকগুলোর পর্ষদ মোট ২ হাজার ২৬৫ কোটি টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
সবচেয়ে বেশি নগদ লভ্যাংশ দেবে ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটি শেয়ারহোল্ডারদের ১৬১ কোটি টাকার নগদ লভ্যাংশ দেবে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫২ কোটি ৮৬ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ দেবে প্রাইম ব্যাংক। আর সিটি ব্যাংক দেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৫২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বিজনেস আওয়ারকে বলেন, কিছু কিছু ব্যাংক প্রত্যাশার থেকে বেশি নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যা শেয়ারবাজারের জন্য সুখবর। ব্যাংকগুলোর এবারের নগদ লভ্যাংশে বাজারে গতি ফিরবে বলে যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের লভ্যাংশের সঙ্গে সঙ্গে মুনাফায়ও উত্থান হয়েছে। যা চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেও প্রতিয়মান হয়েছে। তবে করোনাভাইরাসের কারনে ব্যাংক খাতের মুনাফায় ধস নামবে বলে অনেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে করোনাভাইরাস হলেও ব্যাংকের সুদ গণনা কিন্তু থেমে নেই। আর এটাই ব্যাংকের মুনাফার প্রধান উৎস। তাই মুনাফায় খুব বড় হেরফের হবে না।
লভ্যাংশ ঘোষণা করা ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৩টির পর্ষদ ১৫ শতাংশের বেশি নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তবে এই ঘোষণার পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনায় এ বছর ১৫ শতাংশের বেশি নগদ লভ্যাংশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যাতে বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করা ব্যাংকগুলোর এজিএমে তা কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। আর বেশি অংশের জন্য হয়তো বোনাস শেয়ার দেওয়া হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার জারির আগেই ১৫ শতাংশের বেশি নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ইস্টার্ন ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও এনসিসি ব্যাংক। এরমধ্যে ইস্টার্ন ব্যাংক ২৫%, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ৩০% ও এনসিসি ব্যাংক ১৭% নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ব্যাংকগুলোকে এজিএমে এই বেশি নগদ লভ্যাংশ কমিয়ে আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
নিম্নে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর ২০১৯ সালের ব্যবসায় ঘোষিত শুধুমাত্র নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ তুলে ধরা হল। এক্ষেত্রে ৩টি ব্যাংক ১৫ শতাংশের বেশি ঘোষণা করলেও ১৫ শতাংশ বিবেচনায় নগদ লভ্যাংশ গণনা করা হয়েছে।
ব্যাংকের নাম | নগদ লভ্যাংশের হার | নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ (কোটি টাকা) |
আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক | ১৩% নগদ | ১৩৮.৪৪ |
ব্যাংক এশিয়া | ১০% নগদ | ১১৬.৫৯ |
ব্র্যাক ব্যাংক | ৭.৫% নগদ | ৯২.৫০ |
সিটি ব্যাংক | ১৫% নগদ | ১৫২.৪৬ |
ঢাকা ব্যাংক | ৫% নগদ | ৪২.৬৬ |
ডাচ-বাংলা ব্যাংক | ১৫% নগদ | ৭৫ |
ইস্টার্ন ব্যাংক | ১৫% নগদ | ১২১.৭৭ |
এক্সিম ব্যাংক | ১০% নগদ | ১৪১.২৩ |
ইসলামী ব্যাংক | ১০% নগদ | ১৬১ |
যমুনা ব্যাংক | ১৫% নগদ | ১১২.৩৮ |
মার্কেন্টাইল ব্যাংক | ১১% নগদ | ১০৩.০৯ |
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক | ৫% নগদ | ৩৫.১৭ |
ন্যাশনাল ব্যাংক | ৫% নগদ | ১৪৬.০২ |
এনসিসি ব্যাংক | ১৫% নগদ | ১৩৯.১১ |
ওয়ান ব্যাংক | ৫% নগদ | ৪২.১৬ |
প্রিমিয়ার ব্যাংক | ৫% নগদ | ৪৬.২০ |
প্রাইম ব্যাংক | ১৩.৫০% নগদ | ১৫২.৮৬ |
পূবালি ব্যাংক | ১০% নগদ | ১০২.৮৩ |
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক | ৫% নগদ | ৪৬.৬৭ |
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক | ৫% নগদ | ৪৪.৬৭ |
সাউথইস্ট ব্যাংক | ৭.৫০% নগদ | ৮৭ |
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক | ৫% নগদ | ৪৭.৯০ |
ট্রাস্ট ব্যাংক | ৫% নগদ | ৩০.৬৩ |
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক | ৫% নগদ | ৫৭.৯৮ |
উত্তরা ব্যাংক | ৭% নগদ | ২৮.৫৭ |
মোট | ২২৬৪.৮৯ কোটি টাকা |
নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা ব্যাংকগুলোর মধ্যে গড়ে উদ্যোক্তা/পরিচালকদের মালিকানা রয়েছে ৪০.৩৪ শতাংশ। এ হিসাবে উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা মোট নগদ লভ্যাংশের ৯১৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা পাবে। বাকি ১ হাজার ৩৫১ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাবে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারন বিনিয়োগকারীরা।
এ বছর শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে এবি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, রূপালি ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। আর লোকসানে থাকা আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক এবছরও কোন লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি।