শিল্পায়নে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে পুঁজিবাজারের ভূমিকা অনস্বীকার্য হলেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) ধস নেমেছে। এই অর্থবছরে মাত্র ৪টি কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেছে। এরমধ্যে আবার ১টি কোম্পানির বন্ডের আইপিও রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এমন আচরন ইস্যু ম্যানেজার বা মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ইস্যু আনার ক্ষেত্রে অনীহা তৈরী করছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা একদিকে আইপিও অনুমোদন কমিয়ে দিয়েছে, অন্যদিকে প্রত্যেকটি ইস্যু ম্যানেজারকে ২ বছরে অন্তত্ব ১টি ফাইল দাখিল করার বাধ্যবাধকতা করে রেখেছে। অন্যথায় সনদ বাতিল করার বিধান রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রতি ২ বছরে ১টি করে ফাইল দাখিল করলেও ৬২টি মার্চেন্ট ব্যাংকের ফাইল জমা পড়বে প্রতি বছর ৩১টি। কিন্তু কমিশন যদি ৪টি আইপিও অনুমোদন দেয়, তাহলে ওই ৩১টি ফাইল জমা করে লাভ কি? এছাড়া কমিশন ১টি আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে ৩-৪ বছর সময় নেয় বলে অভিযোগ আছে।
বিএসইসি গত ১২ অর্থবছরে ১১৯টি কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিয়েছে। অর্থাৎ বছরে গড়ে আইপিও দিয়েছে ১০টি। কিন্তু বিএসইসির নির্দেশনা পরিপালন করতে গেলে ফাইল জমা পড়বে ৩১টি। এক্ষেত্রে কমিশনের নির্দেশনা ও আইপিও অনুমোদন দুই মেরুতে অবস্থান করছে। এতে করে অনেক মার্চেন্ট ব্যাংকের মধ্যে আইপিও নিয়ে কাজ করতে অনীহা তৈরী হয়েছে। বিএসইসির এমন আচরন পরিবর্তন না করা গেলে, ফাইল দাখিলে একদিকে মার্চেন্ট ব্যাংকের শ্রম ব্যয় হবে এবং অন্যদিকে আইপিওতে আসতে চাওয়া কোম্পানির ব্যয় হবে এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন ঝুকিঁর মধ্যে পড়বে।
বিএসইসির ওয়েবসাইটে প্রদত্ত আর্কাইভ অনুযায়ি, সবচেয়ে কম আইপিও দেওয়া হয়েছে ২০১৯-২০ অর্থবছরে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির ওয়েবসাইটে ২০০৮-০৯ অর্থবছর পর্যন্ত আইপিওর তথ্য দেওয়া আছে। এ হিসাবে বিগত ১২ অর্থবছরের মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সবচেয়ে কম আইপিও দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এর আগের কত অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন, তথ্য না থাকায় তা জানা যায়নি। এছাড়া ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে ১১ সাল পর্যন্ত তথ্য থাকার কারনেও জানা সম্ভব হয়নি।
আইপিওর কারনে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এমন সমালোচনায় খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯-২০ অর্থবছরে আইপিও অনেকটা স্থগিত করে দেয়। কিন্তু বাজারে এর কোন প্রভাব পড়েনি। এমনকি আইপিও বন্ধ করার পরে পুঁজিবাজারে আরও মন্দা তৈরী হয়েছে। ওই কমিশনের ৯ বছরে বিএসইসি গঠনের ২৭ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম আইপিও দিয়েছে। যে কমিশন দায়িত্বের ৯ বছরে নিয়মিতভাবে আইপিও অনুমোদন কমিয়েছে।
দেখা গেছে, বিএসইসি গঠনের ২৭ বছরে (১৯৯৩) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ২৮৪ কোম্পানি (তালিকাচ্যুত ছাড়া)। এরমধ্যে কমিশন গঠনের প্রথম ৯ বছরে তালিকাভুক্ত হয়েছে ৯৯ কোম্পানি। আর দ্বিতীয় ৯ বছরে তালিকাভুক্ত হয়েছে ৯৪টি। বাকি ৯ বছরে অর্থাৎ খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন সময়ে তালিকাভুক্ত হয়েছে ৯১টি। অথচ এই সময়ে দেশের অর্থনীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নিত হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে এবং অনেক বড় হয়েছে। কিন্তু দেশের পুঁজিবাজার সেভাবে এগোচ্ছে না। এই সমস্যা কাটিয়ে তুলতে পুঁজিবাজারের অংশগ্রহণ বাড়ানো দরকার। এক্ষেত্রে বেশি বেশি করে ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনতে হবে।
এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান বলেন, অনেকে বাজারের মন্দার জন্য আইপিওকে দায়ী করে। কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছরে আইপিও বন্ধ থাকার উপক্রম হলেও বাজারের কোন উন্নতি হয়নি। বরং আরও বেশি তলানিতে গিয়েছে। তাই পুঁজিবাজারের স্বার্থে আইপিও চলমান রাখা দরকার। এতে যোগ্য বিনিয়োগকারীরাসহ সাধারন বিনিয়োগকারীরা আইপিও শেয়ারে যেমন কয়েকগুণ লাভবান হয়, একইভাবে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর কমিশনবাবাদ আয় বাড়ে। এছাড়া তালিকাভুক্তির কারনে স্টক এক্সচেঞ্জ বড় ধরনের ফি পেয়ে থাকে। আর নতুন শেয়ারের আগমনে বাজারে কম্পোন (ভাইব্রেন্ট) তৈরী হয়।