1. [email protected] : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারবার্তা : nayan শেয়ারবার্তা
  3. [email protected] : news uploder : news uploder
কৌশলে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজে কর্মী গণছাঁটাই
রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:১৮ এএম

কৌশলে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজে কর্মী গণছাঁটাই

  • আপডেট সময় : সোমবার, ২৯ জুন, ২০২০

পুঁজিবাজারের শীর্ষ ব্রোকারহাউজ নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের সহযোগী কোম্পানি লংকাবাংলা সিকিউরিটিজে গণছাঁটাই শুরু হয়েছে। চলতি মাসেই প্রতিষ্ঠানটিতে ৫৬ জন কর্মী পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের তিনটি শাখার ২৮ জন কর্মী রয়েছেন। আগামী এক মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিতে শতাধিক কর্মী চাকরি হারাতে পারেন বলে জানা গেছে।

কর্মীদের ‘পদত্যাগ’ আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ জুন) কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

তবে বদনাম এড়াতে (Bad Reputation) প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি কর্মী ছাঁটাই না করে কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে একাধিক ‘পদত্যাগকারী’ কর্মী জানিয়েছেন, তাদেরকে চাপ দিয়ে ও নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। পাশাপাশি পুনঃরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার প্রলোভনও দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। তবে  যারা পদত্যাগ করেছেন তাদের এক পঞ্চমাংশও শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে নতুন করে চাকরি পাবে কি-না তা নিয়ে ওই কর্মীরা সংশয় প্রকাশ করেছেন।

অভিযোগ অনুসারে, প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ বিভাগ থেকে কর্মীদের ফোন করে পদত্যাগ করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। ভয় দেখানো হয়, স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে পারফরম্যান্স খারাপ দেখিয়ে বরখাস্ত করা হবে। আটকে দেওয়া হবে প্রভিডেন্ড ফান্ডসহ প্রাপ্য সুবিধা। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি থেকে ছাড়পত্র বা ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হবে না। তাতে তারা কখনোই অন্য কোনো ব্রোকারহাউজে চাকরি নিতে পারবেন না। তাই কর্মীরা বাধ্য হয়েই পদত্যাগপত্র জমা দিচ্ছেন।

লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ কর্তৃপক্ষ ছাঁটাইয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, কর্মীরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। আর এদের কেউ কেউ পুনরায় যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবেন। প্রতিষ্ঠানটির বক্তব্য জানতে গত বুধবার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাফফাত রেজার সঙ্গে যখন যোগাযোগ করা হয়, তখন পর্যন্ত অর্থসূচকের কাছে ২৮ জনের পদত্যাগের তথ্য ছিল। এটি বেড়ে এখন ৫০ ছাড়িয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, পুঁজিবাজারে চলমান চরম মন্দায় টিকে থাকার প্রয়োজনে তারা ব্যয় সাশ্রয়ের এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন।

জানা গেছে, পুঁজিবাজারের টানা মন্দায় তীব্র আর্থিক সংকটে পড়েছে দেশের সবগুলো ব্রোকারহাউজ। এগুলোর মধ্যে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের জনবল সংখ্যা এবং পরিচালন ব্যয় তুলনামূলক বেশি। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি সবচেয়ে বেশি নাজুক অবস্থায় পড়েছে। গত বছরের শুরুর দিকেও এই প্রতিষ্ঠানে মাসিক পরিচালন ব্যয় ৪ কোটি টাকার উপরে ছিল বলে জানা গেছে। এই পরিমাণ আয় নিশ্চিত করতে হলে গড়ে দৈনিক ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকার লেনদেন হওয়া দরকার প্রতিষ্ঠানটিতে। কিন্তু গত মার্চে ফ্লোর প্রাইস ব্যবস্থা চালু করার আগে পর্যন্ত বাজারে গড়ে ৩শ কোটি টাকার মতো লেনদেন হতো। তাতে একটি ব্রোকারহাউজের পক্ষে কোনোভাবেই ১০০ কোটি টাকা লেনদেন সম্ভব নয়। এমন অবস্থায় গত বছরের শেষ ভাগে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ কর্মী ছাঁটাইয়ের পথ বেছে নেয়। সর্বশেষ চলতি মাসের ফেব্রুয়ারি মাসেও বেশ কয়েকজন কর্মী ছাঁটাই করা হয়। সাধারণ ছুটির পরে বাজারে পুনরায় লেনদেন শুরু হওয়ার পরে করোনার আতঙ্ক ও ফ্লোর প্রাইস ব্যবস্থার কারণে বাজারে লেনদেনের পরিমাণ শত কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। কবে এই ফ্লোর প্রাইস ব্যবস্থা উঠবে বা বাজারে স্বাভাবিক গতি ফিরবে সেটিও স্পষ্ট নয়। এমন অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটি অনেকটা অস্তিত্বের প্রয়োজনই কর্মী ছাঁটাইয়ের পথ বেছে নিয়েছে।

‘পদত্যাগকারী’ একাধিক কর্মীও এই বাস্তবতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কিন্তু তাদের অভিযোগ এভাবে ৭ দিন/১০ দিন সময়ে দিয়ে পদত্যাগে বাধ্য না করে তিন মাস সময় দিতে পারতো প্রতিষ্ঠানটি।

তাদের আরেকটি অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটির উপরের দিকের কিছু কর্মকর্তা, যারা ম্যানেজমেন্টের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত, তাদের বেতন-ভাতা পারফরম্যান্সের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে একেবারেই অস্বাভাবিক। তাই ব্যয় সাশ্রয়ের কথা বলা হলে সেখানেও হাত দেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমনটি হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মী দুঃখ করে বলেন, যতটা না আর্থিক সঙ্কট, তারচেয়ে বেশি সঙ্কীর্ণ মানসিকতার কারণে তাদেরকে এমন স্বল্প সময়ে করোনার দুর্যোগের মধ্যে অসহায়ভাবে বিদায় নিতে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি ঈদ-উল-ফিতরের বোনাসের বিষয় তুলে ধরে বলেন, ঈদে আমাদের মূল বেতনের (Basic Salary) ২০ শতাংশ বোনাস দেওয়া হয়েছিল। সেটিও পরে বেতন থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে।

কর্মী ছাঁটাইয়ের বিষয়ে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাফফাত রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের সিইও সাফফাত রেজা বলেন, কোনো কর্মকর্তাকে চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়েছে এমন খবর সঠিক নয়। তারা নিজেরাই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে অনেকেই আবার চাকরিতে যুক্ত হবেন (রিজয়েন করবেন)। তাদের বেতন কাঠামো পুনর্গঠন করা হবে। তিনি আরো বলেন অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে ব্রোকারেজ ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে দুই মাস পর পুরো কোম্পানি বন্ধ করে দিতে হতে পারে। তাই আগে থেকেই খরচ কমানোর চিন্তা করতে হবে। যারা চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে তাদের মধ্যে অনেকেই আবারও যোগ দেওয়ার (Re-join) সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:

ভালো লাগলে শেয়ার করবেন...

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ