পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির সাপ্তাহিক লেনদেন নিয়ে আজগুবি হিসাব দেখিয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। প্রতিষ্ঠানটির দেখানো লেনদেনের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই।
সাপ্তাহিক লেনদেনের চিত্র তুলে ধরে ডিএসইর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে টাকার অঙ্কে সবথেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো ফার্মার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির ৩ কোটি ১৩ লাখ ৭২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে বলে ডিএসইর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
অথচ বেক্সিমকো ফার্মার লেনদেনের চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শুধু বৃহস্পতিবারই কোম্পানিটির ৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা লেনদেন হয়। তার আগের দিন বুধবার লেনদেন হয় ৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এছাড়া মঙ্গলবার ৯ কোটি ২ লাখ টাকা, সোমবার ৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা এবং রোববার ২ কোটি ৪৯ টাকার লেনদেন হয়।
শুধু বেক্সিমকো ফার্মা নয় বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস, লিন্ডে বিডি, এক্সিম ব্যাংক, রেকিট বেনকিজার, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালসসহ বিভিন্ন কোম্পানির এমন আজগুবি হিসাব দেখিয়েছে ডিএসই। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভুল বার্তা যাচ্ছে। বিভ্রান্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
তরিকুল ইসলাম নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, ডিএসই থেকে প্রায় সময় ভুলে ভরা তথ্য প্রকাশ করা হয়। এটা আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। কখনো কখনো আমাদের ক্ষতির মুখেও পড়তে হয়। প্রায়ই ভুলে ভরা তথ্য প্রকাশ করলেও গণমাধ্যমের সংবাদ দেখি ডিএসইর কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের বেতন পান। মোটা অঙ্কের কর্মীদের কাজের নজির যদি এই হয়, সেই দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন কীভাবে হবে।
ডিএসইর এক কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সবাই বেতন কাটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। যে কোনো মুহূর্তে বেতন কাটার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে এ ধরনের ভুল আমাদের আরও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেবে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উচ্চ বেতনে শীর্ষ পর্যায়ে কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ায় ডিএসইর ব্যয়ের পাল্লা প্রতিনিয়ত ভারী হচ্ছে। অথচ ব্যবসায় কোনো উন্নতি হচ্ছে না। উল্টো আয় তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে ডিএসইর আর্থিক অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। যে কারণে কর্মীদের বেতন কাটার পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন শেয়ারহোল্ডাররা। ইতোমধ্যে এ লক্ষ্যে একটি কমিটিও গঠন করেছে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ।
ডিএসইর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্টক এক্সচেঞ্জটিতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ৩৬০ জন। তবে প্রধান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা (সিআরও) পদে বর্তমানে কেউ নেই। এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেছনে প্রতিমাসে ডিএসইকে ৩ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে বছরে ব্যয় হচ্ছে ৩৮ কোটি টাকা।
এর মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও), প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) এবং প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তার (সিটিও) পেছনে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে ডিএসইকে। অথচ তাদের প্রত্যেকের কাজ অনেকটাই দায়সারা গোছের।
এদের মধ্যে সিএফও এবং সিটিও পদ দু’টিতে দায়িত্ব পালনকারীরা প্রথমে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে ডিএসইতে ঢোকেন। তবে পরবর্তীতে তারা তাদের পদ স্থায়ী করে নেন। পদ স্থায়ী করা হলেও তাদের বেতন কাঠামো নতুন করে পুনঃনির্ধারণ করা হয়নি। উল্টো চুক্তিভিত্তিক উচ্চ বেতনের সঙ্গে তারা নিয়মিত কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা নেয়া শুরু করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিএসইর এমডির পেছনে প্রতি মাসে বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় হচ্ছে ১২ লাখ টাকা। ২ লাখ টাকা মূল বেতনে নিয়োগ পাওয়া সিএফও এখন বেতন নিচ্ছেন ৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এর সঙ্গে গ্রাচ্যুইটি, শ্রমিক কল্যাণ তহবিল, কার রক্ষণাবেক্ষণ, ড্রাইভার, প্রভিডেন্ট ফান্ড, বীমা প্রিমিয়াম, মোবাইল বিল মিলিয়ে প্রতি মাসে আরও প্রায় ২ লাখ টাকা পান তিনি। সব মিলিয়ে সিএফও’র পেছনে প্রতি মাসে ডিএসইর ব্যয় হচ্ছে ৭ লাখ ১৯ হাজার টাকা।
একই অবস্থা সিওও এবং সিটিও পদ দু’টির ক্ষেত্রেও। ২ লাখ টাকা মূল বেতনে ডিএসইতে যোগদান করা সিটিও বর্তমানে মোট বেতন পান ৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। আর ২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা মূল বেতনে যোগ দেয়া সিওও মোট বেতন পান ৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এর সঙ্গে গ্রাচ্যুইটি, শ্রমিক কল্যাণ তহবিল, কার রক্ষণাবেক্ষণ, ড্রাইভার, প্রভিডেন্ট ফান্ড, বীমা প্রিমিয়াম, মোবাইল বিল মিলিয়ে প্রতি মাসে তারা আরও প্রায় ২ লাখ টাকা পান। ফলে এই দুই কার্মকর্তার একেক জনের পেছনেও প্রতি মাসে ডিএসইর সাত লাখ টাকার ওপরে খরচ করতে হয়।