1. [email protected] : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারবার্তা : nayan শেয়ারবার্তা
  3. [email protected] : news uploder : news uploder
বাজেটে পুঁজিবাজারকে ভাইবারেন্ট করা হয়নি বরং অবহেলা করা হয়েছে: রকিবুর রহমান
বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২৭ পিএম

বাজেটে পুঁজিবাজারকে ভাইবারেন্ট করা হয়নি বরং অবহেলা করা হয়েছে: রকিবুর রহমান

  • আপডেট সময় : রবিবার, ২১ জুন, ২০২০
rakibur-rahman

পুঁজিবাজারকে ভালো করার অথবা স্থিতিশীল করার কোনো পরিকল্পনা নতুন অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রস্তাবিত বাজেটে নেই উল্লেখ করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারকে অবহেলা করা হয়েছে।

রোববার গণমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন তিনি।

আমরা যদি ২০২০-২১ এর বাজেটে পুঁজিবাজার related যে প্রস্তাবনাগুলো দেওয়া হয়েছে তার দিকে লক্ষ্য করি তবে দেখা যায় পুজিবাজারকে ভালো করার অথবা stable করার কোন পরিকল্পনা বা দিকনির্দেশনা এই বাজেটে নেই। পুঁজিবাজারকে vibrant এবং stable করার জন্য বিএসইসি, মার্চেন্ট ব্যাংক এসোসিয়েশন, ডিএসই, সিএসই, বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ, বিএএলসি (বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ লিস্টেড কোম্পানি) যতগুলি প্রস্তাব দিয়েছে তার কোনোটাই consideration করা হয়নি বরং প্রস্তাবিত বাজেটে এমন কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে যা পুঁজিবাজারে নতুন নতুন কোম্পানি লিস্টিং করাকে নিরুৎসাহিত করবে যেমন লিস্টেড কোম্পানির corporate tax না কমিয়ে উল্টো নন-লিস্টেড কোম্পানিগুলোর corporate tax ২.৫% কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

ফলে যে সকল কোম্পানি পুঁজিবাজারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে নিজেদের শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে বা expansion  করতে চাইবে  এবং দীর্ঘমেয়াদী লোন পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করতে আগ্রহী হবে তারা বরং এখন উৎসাহিত হবে পুঁজিবাজারে না আসার জন্য। অপরদিকে পৃথিবীর সব দেশ বিশেষ করে ভারত সরকার পুঁজিবাজারে লিস্টেড কোম্পানির corporate tax ৫% কমিয়ে দিয়েছে তাও ৪ মাস আগে। এটা এই জন্য করেছে যাতে করে লিস্টেড কোম্পানি গুলোর corporate tax কমানোর ফলে (করোনা ভাইরাসের কারণে যে আর্থিক বিপর্যয় ঘটেছে এবং ঘটছে তা থেকে) তাদের financial strength  অনেক বেশি শক্তিশালী হয়।

ভারত সরকার লিস্টেড কোম্পানিগুলোকে  যারা অ্যাডভান্স ট্যাক্স দিয়েছিল সেটাও তাদের ফেরত দিয়েছে যার পরিমাণ প্রায় ১ লক্ষ ৬৩ হাজার কোটি রুপি। বিভিন্ন দেশের সরকার এই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সময় পুজিবাজার যেন ভালো থাকে, চাঙ্গা থাকে এবং বিনিয়োগকারীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার জন্য বিভিন্ন আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করছে এবং দিয়ে যাচ্ছে, সেটা আমেরিকা হোক ইন্দোনেশিয়া হোক, থাইল্যান্ড হোক, চায়না হোক,মালয়েশিয়া হোক। সবার একটি উদ্দেশ্য পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা রাখা এবং অর্থনীতিকে গতিশীল করা।

আমাদের প্রস্তাবিত বাজেট ২০২০-২১ এ আমি দেখলাম সব কিছু উল্টো যেমন গত বছর ডিভিডেন্ড ইনকাম ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ট্যাক্স মওকুফ করা হয়েছিল এবার বাজেটেও সেটাকে repeat করা হয়েছে। যেটা রিপিট করার প্রয়োজন ছিল না যেহেতু এটা বলবৎ আছে।

জানুয়ারি ২০২০ এ যখন পুঁজিবাজারে ক্রমাগত দরপতন হচ্ছিল তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজারকে stable করার জন্য স্বল্প ও মধ্য মেয়াদি কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এগুলো হচ্ছে পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ বাড়ানো, মার্চেন্ট ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া, আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ানো, পুঁজিবাজারের আস্থা বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং বাজারে মানসম্পন্ন আইপিও বাড়াতে বহুজাতিক ও সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোকে তালিকাবদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই সকল নির্দেশনা অর্থমন্ত্রীর ঘোষিত বাজেটর কয়েক মাস আগেই নেওয়া হয়েছিল যার কোনটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ মাননীয় অর্থমন্ত্রী ২০২০-২১ এর বাজেটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানুয়ারিতে যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন সেটা তুলে ধরেছেন।

সবচেয়ে বড় কথা হলো গত জানুয়ারিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তারল্যসংকট দূর করার জন্য প্রত্যেকটি ব্যাংকগুলোকে সহজ শর্তে মাত্র ৪% সুদে পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করার জন্য ২০০ কোটি টাকা করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং এই টাকাটা নিতে যদি কোন ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিট ক্রস করে সেটা থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ এই টাকাটা ব্যাংকগুলোকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। যদি কোন ব্যাংক পুজিবাজারে বিনিয়োগ করার ফলে বছর শেষে লসও করে তাহলে তাকে ওই লস এর জন্য কোন প্রভিশন করতে হবেনা। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো যেমন সোনালী,রূপালী, জনতা, অগ্রণী কে পুঁজিবাজারে active role play করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, আইসিবিকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। দুর্ভাগ্য হলো আজ ছয় মাসে এর কোনটি কার্যকর হয়নি, গত ছয় মাসে একটি সরকারি ভালো কোম্পানির শেয়ার direct listing এর মাধ্যমে আসার কোন ঘোষণাও আসেনি। অথচ মাননীয় অর্থমন্ত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জানুয়ারিতে দেওয়া ৬ টি নির্দেশনা বাজেট ২০২০-২১ এ তুলে ধরেছেন এটা আমার কাছে খুবই অবাক লেগেছে।

তিনি যদি ছয় মাস আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ৬ টি নির্দেশনা দিয়েছিল তার  কোন একটি বাস্তবায়ন হয়েছে অথবা  কোন একটি বাস্তবায়নের পথে অথবা বাস্তবায়নের পথে কোন অন্তরায় আছে কিনা সেটা যদি তুলে ধরতেন তাহলে পুঁজিবাজার এবং আমরা অনেক উপকৃত হতাম এবং বাস্তবতার আলোকে আমরা সবকিছু পর্যালোচনা করতে পারতাম।

আমি বেশি কথায় যেতে চাই না এখন যে বিষয়টি আমি তুলে ধরতে চাই তা হলো মাননীয় অর্থমন্ত্রী ২০২০-২১ বাজেটে অত্যন্ত সহজ শর্তে অপ্রদর্শিত কালো টাকা সাদা করে মূল অর্থনীতিতে নিয়ে আসার যে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন করোনা ভাইরাসের জন্য দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের সময়ে তা অত্যন্ত যুগান্তকারী ও সঠিক সিদ্ধান্ত। অপ্রদর্শিত টাকা যেখানে যে অবস্থায় আছে সেটা ফিক্সড ডিপোজিট হোক, সঞ্চয় পত্রেই হোক, ব্যাংকে থাকুক, বাড়িতে থাকুক বা কারো সিন্ধুকেই থাকুক যেখানেই থাকুক মাত্র ১০% ট্যাক্স দিয়ে টাকাটা সাদা করার সুযোগ দিয়েছেন এবং সেখানে কোনো শর্ত নেই যে এই সাদা টাকা টা তাকে কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় বিনিয়োগ করে ধরে রাখতে হবে। কিন্তু অপরদিকে হতাশ হওয়ার কারণ হলো পুঁজিবাজারে শেয়ারে যদি কেউ বিনিয়োগ করে তাকে ১০% ট্যাক্স দিয়ে তিন বছরের জন্য টাকাটা সেখানে ধরে রাখতে হবে। এর অর্থ হল আমি যদি বুঝে থাকি কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারকে সম্পূর্ণ নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। শর্ত নিয়ে কেউ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে না যার প্রমাণ আমরা পেয়েছি  ১৯৯৭-৯৮, ২০১১-১২ সালে বাজেটে যেখানে  একই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল এবং দুই বছর শেয়ার মার্কেটে রেখে দিতে হবে এই শর্ত দেওয়ার ফলে  ঐ সময়ে এটা কোন কাজে আসেনি, কেউ পুজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগও করেনি  বরং এখন যদি পুঁজিবাজারে শর্ত দিয়ে বিনিয়োগর কথা বলা হয় তাতে করে  যারা অপ্রদর্শিত কালো টাকা বিনিয়োগ করে শেয়ার কিনেছেন তারা উল্টো শেয়ার বিক্রির সুযোগ পেলে শেয়ারগুলো বিক্রি করে টাকাটা ব্যাংকে নিয়ে ১০% ট্যাক্স দিয়ে টাকা টা সাদা করে নিবে। কারণ সেখানে কোন শর্ত নেই।  এতে করে ব্যাপকভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা কালো টাকায় যারা শেয়ার কিনেছেন তারা শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে বের হয়ে যাবে বলে আমি মনে করি। মাননীয় অর্থমন্ত্রী আমার দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতার আলোকে বর্তমান  বাস্তবতা তুলে ধরলাম।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার আপনার এবং আপনার সরকারের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আপনি ভালো বুঝবেন। আপনি বলেছেন পুঁজিবাজার চাঙ্গা রাখা সরকারের কাজ না, সরকারের কাজ দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা আর অর্থনীতি শক্তিশালী হলে পুঁজিবাজার এমনিতেই চাঙ্গা হবে। আপনার এই বক্তব্যের সাথে আমি একেবারেই একমত হতে পারলাম না। মাননীয় অর্থমন্ত্রী পৃথিবীর সব দেশের Monetary Policy তে Money Market এবং Capital Market কে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। Capital Market কে vibrant করার জন্য সব ধরনের প্রণোদনা অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সে দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংক দিয়ে থাকে। কারণ ক্যাপিটাল মার্কেটকে শক্তিশালী করে অর্থনৈতিক কে চাঙ্গা রাখা সে সকল দেশের লক্ষ্য। বিভিন্ন Developed এবং Developing Country গুলোতে পুজিবাজার সে দেশের GDP তে মিনিমাম ৬০-১৫০% পর্যন্ত কন্ট্রিবিউট করে থাকে।

অপরদিকে আমাদের দেশের পুঁজিবাজার মাত্র ১৪-১৫% কন্ট্রিবিউট করে যেটা একেবারেই গুরুত্বহীন। একসময় সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত ভাই বলেছিলেন আমাদের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের কোন গুরুত্বই নেই। আবার এক সময় অনেক অর্থনীতিবিদ, সাবেক অর্থমন্ত্রী এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন সচিবরা বলেছিলেন পুঁজিবাজার হলো একটি জুয়ার কোর্ট, মাছের বাজার এবং পুঁজিপতিদের শোষণের হাতিয়ার। কিন্তু বিশ্বের সকল দেশের পুঁজিবাজার প্রমাণ করেছে অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার এটি একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। মাননীয় অর্থমন্ত্রী আমার সকল অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি আমার বক্তব্য তুলে ধরলাম। আশা করি আপনি বাস্তবতার আলোকে, ইমোশন থেকে বের হয়ে, কারো প্রভাবে প্রভাবিত না হয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবেন না। আমি আপনার সফলতা কামনা করছি

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:

ভালো লাগলে শেয়ার করবেন...

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ