ব্রিটেনের গবেষকরা জানিয়েছেন, জেনেরিক স্টেরয়েড ডেক্সামেথাসোন করোনা সংক্রমণে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। দেখা গেছে, সংকটাপন্ন কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে এই ওষুধে সুফল পাওয়া গেছে। এই ওষুধ প্রয়োগে প্রতি আটজন রোগীর মধ্যে একজনকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। সেই সঙ্গে এই ওষুধের সহজলভ্যতা ও কম দাম রাতারাতি করোনা চিকিৎসায় সাড়া ফেলে দিয়েছে।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে সহজলভ্য ওষুধ ডেক্সামেথাসন। এমন তথ্য জানিয়েছেন ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞরা। তবে ওই বিশেষজ্ঞরাই সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ ওষুধ সেবন করলে মৃত্যুও হতে পারে।
জানা গেছে, এর আগে ওষুধটি বাংলাদেশের চিকিৎসকরা ব্যবহার করে ফল পেয়েছেন। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় প্রণীত জাতীয় নির্দেশিকায় ওষুধটি ব্যবহারের কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু এটি করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় মূল ওষুধ নয়। সাপ্লিমেন্ট হিসেবে রোগীকে দিলে উপকার পাওয়া যায়।
ব্রিটিশ গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক মার্টিন ল্যান্ড্রেই বলেন, করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির উপসর্গ গুরুতর না হলে এই ওষুধ কোনো উপকারে আসে না। আবার ডোজের সামান্য হেরফের হলে কিংবা সঠিক ব্যক্তির ওপর প্রয়োগ না হলে এই ওষুধটিই মৃত্যুর কারণ হতে পারে। ওষুধটি শুধু হাসপাতালে থাকা করোনা সংক্রমিত রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা যাবে।কিন্তু কোনোভাবেই চিকিৎসক ছাড়া সাধারণ মানুষের এটি কিনে বাড়িতে নেওয়া বা নিজে নিজে এই ওষুধ গ্রহণ করা কোনোভাবেই উচিত না, এর পরিণাম খুবই ভয়ংকর হতে পারে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন একবার করে টানা ১০ দিন ডেক্সামেথাসোন প্রয়োগের ফলেসংকটাপন্ন রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা উল্লেখজনক হারে কমে। ইংল্যান্ডের প্রধান স্বাস্থ্য অধিকর্তা অধ্যাপক ক্রিস হুইটি এক বিবৃতিতে জানান, ভেন্টিলেশনে থাকা এবং অক্সিজেনের সাহায্যে নিঃশ্বাস নেওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ফলদায়ী এই ওষুধ।
ডেক্সামেথাসোনের সাদৃশ্য রয়েছে মানুষের অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে নিসৃত প্রাকৃতিক হরমোনের, যা অনেক সময় প্রদাহ সারাতে ব্যবহার করা হয়। করোনাভাইরাসের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের জেরে কোষের অভ্যন্তরে প্রদাহ দেখা দেয়, যা সারাতে কাজে লাগে ডেক্সামেথ্যাসোন। আসলে মানুষের শরীরে থাকা জন্মগত রোগ প্রতিরোধ শক্তি অত্যধিক পরিশ্রম করলে মৃত্যুর আশঙ্কা ঘনায়। তা ঠেকাতেই এই স্টেরয়েড কার্যকরী হয়।
শুধু তাই নয়, বিভিন্ন রকম আর্থ্রাইটিস এবং ত্বক, রক্ত, কিডনি, চোখ, থাইরয়েড ও পাকস্থলিজনিত সমস্যার চিকিৎসায় এই ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া কয়েক রকম অ্যালার্জি ও অ্যাজমা সারাতেও তা ফলদায়ী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকায় ১৯৭৭ সাল থেকেই রয়েছে ডেক্সামেথ্যাসোন এবং তার নানান রকম যৌগ। ওষুধটি বিভিন্ন নামে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই সহজলভ্য।
তবে ডেক্সামেথাসোনের বেশ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে, যদিও তা নির্ভর করে ওষুধের পরিমাণ, অনেকগুলো পরিস্থিতি ও শারীরিক অবস্থার ওপরে।
এই স্টেরয়েডের সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সাধারণত দেখা যায়, ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, হজমের গন্ডগোল, মাথাঘোরা, পটাশিয়ামের অভাব দেখা দেয়া, সেরাম গ্লুকোজ মাত্রা বৃদ্ধি, বিশেষ করে যাদের ডায়াবিটিস রয়েছে, ঘুমের সমস্যা, পেশি দুর্বল হয়ে পড়া, ঋতুস্রাবের সমস্যা, হঠাৎ খিদে পাওয়া, মেজাজের আচমকা পরিবর্তন, শিশুদের ক্ষেত্রে বেড়ে ওঠার সমস্যা, ত্বকের ঘনত্ব কমে গিয়ে শরীরে ক্ষত তৈরি হওয়া, এমনকি মানসিক অবসাদ।
রোগীর যদি কোনও বিষয়ে অ্যালার্জির প্রবণতা থাকে, তাহলে ওষুধ খাওয়ার আগে তা চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের জানাতে হবে।
এ জন্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, জীবন রক্ষাকারী এই ওষুধটি শুধু সেসব কোভিড রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা উচিত, যাদের অবস্থা গুরুতর।