আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য আজ বিকালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে বৈঠক করবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এনবিআর ও বিএসইসি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) বিকাল ৩টায় এনবিআরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সঙ্গে বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। বিএসইসির কমিশনারবৃন্দও বৈঠকে অংশ নেবেন। অন্যদিকে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সদস্যও এই বৈঠকে থাকতে পারেন।
জানা গেছে, বৈঠকে বিএসইসির পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার (কালো টাকা সাদা করা) ক্ষেত্রে আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রস্তাবিত ৩ বছরের লকইন তুলে নেওয়াসহ স্টেকহোল্ডারদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে আলোচনা করা হবে। এছাড়া বিএসইসি নিজে বাজেটের আগে যেসব প্রস্তাব দিয়েছিল সেগুলোও আলোচনায় স্থান পাবে।
উল্লেখ, গত বৃহস্পতিবার (১১ জুন) জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন। তাতে ১০ শতাংশ কর দিয়ে পুঁজিবাজারসহ বিভিন্ন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য খাতে বিনিয়োগে কোনো শর্ত দেওয়া না হলেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৩ বছরের বিনিয়োগ বহাল থাকা তথা লকইনের শর্ত দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার পর প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার পর তা পাশ হবে। আর নিয়ম অনুসারে আগামী ১ জুলাই থেকে এই বাজেট কার্যকর হবে। তাই ঘোষিত বাজেটের বিভিন্ন প্রস্তাবনা সংশোধন ও সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ এখনো আছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক কিছু বিষয় বের করে আনার চেষ্টা করবে বিএসইসি।
আগামী বাজেটের কিছু প্রস্তাব পুঁজিবাজারের জন্য অনুকূল নয়, আবার স্টেকহোল্ডারদের অনেক দাবি বাজেটে উপেক্ষিত থেকে গেছে বলে জানিয়েছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও ডিএসই ব্রোকারর্স অ্যাসোসিয়েশন। ইতোমধ্যে তারা আদের এই বক্তব্য ও দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে।
অন্যদিকে বাজেটের আগে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিও অর্থমন্ত্রণালয়ের কাছে কিছু সুপারিশ করেছিল। এসব সুপারিশের কিছুই বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। ওই সুপারিশগুলোও আজকের আলোচনায় স্থান পেতে পারে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্লট ও ফ্ল্যাট কেনা, নগদ জমা, ব্যাংক জমা, সঞ্চয়পত্র কেনা, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসহ ঢালাওভাবে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যে কেউ ১০ শতাংশ কর পরিশোধ সাপেক্ষে এই সুবিধা নিতে পারবেন। কিন্তু অন্যান্য খাতে বিনা শর্তে টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলেও শুধু পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে ৩ বছরের লক-ইন এর শর্ত আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অন্যান্য খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের অবাধ সুযোগ থাকায় ৩ বছরের লক-ইনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ-ই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে আসবে না। তাই লকইনের শর্তটি প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।
ঘোষিত বাজেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার না কমিয়ে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি কার্যকর হলে এই দুই ধরনের কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান ১০ শতাংশ থেকে কমে সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে আসবে। তাতে ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে অনাগ্রহী হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার কমিয়ে ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে ডিএসই, সিএসই ও বিএমবিএ।
খোদ বিএসইসিও তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার কমানোর সুপারিশ করেছিল অর্থমন্ত্রণালয়ের কাছে। তাই আজকের আলোচনায় তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহার কমানোর বিষয়টিও স্থান পাবে।
এছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকের আয়করের বিদ্যমান হার ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ, ব্রোকারহাউজে লেনদেনের উৎসে করের হার ০.০৫% থেকে কমিয়ে ০.০১৫% নির্ধারণের সুপারিশ করতে পারে বিএসইসি।