আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সন্তুষ্ট নয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। দেশের প্রধান এই স্টক এক্সচেঞ্জের মতে,বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) বিনিয়োগের সুযোগ ছাড়া পুঁজিবাজারের জন্য আর কিছুই নেই।কিন্তু এই অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শর্তের নামে প্যাঁচ কষে দেওয়ায় বাস্তবে কোনো লাভই হবে না।
অন্যদিকে বাজেটে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর ব্যবধান কমানো এবং জিরো কুপন বন্ডের কর সুবিধা প্রত্যাহারসংক্রান্ত কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে,যা বাজারকে উল্টো ক্ষতিগ্রস্ত করবে।অথচ করোনাভাইরাস সংকটের প্রভাবে নাজুক বাজারে প্রাণ ফেরাতে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার বাজারের জন্য নীতিসমর্থন বেশি জরুরি।
এমন অবস্থায় বাজেট প্রস্তাবনা পুনর্বিবেচনা ও ইতিবাচক কিছু উদ্যোগের বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সহায়তা চেয়েছে ডিএসই।
মঙ্গলবার ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। এ সময় বিএসইসির কমিশনার খোন্দকার কামালউজ্জামান,অধ্যাপক ড.শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ,অধ্যাপক ড.মো.মিজানুর রহমান ও মো.আব্দুল হালিম উপস্থিত ছিলেন।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বিষয়গুলো নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর)সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
উল্লেখ,প্রস্তাবিত বাজেটে ১০ শতাংশ কর দিয়ে পুঁজিবাজারের পাশাপাশি প্লট-ফ্ল্যাট কেনা,সঞ্চয়পত্র কেনা, ব্যাংকে আমানত রাখার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে বিনা শর্তে টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৩ বছর বিনিয়োগ রাখার শর্ত আরোপ করা হয়েছে। ডিএসইসহ সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন,শর্তের কারণে কেউ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে টাকা সাদা করার ঝুঁকি নেবে না। তাই এই শর্ত প্রত্যাহার করা দরকার।
অন্যদিকে বাজেটে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির আয়করের হার আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হলেও তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে এই দুই ধরনের কোম্পানির মধ্যকার কর হারের ব্যবধান ১০ শতাংশ থেকে কমে সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে আসবে। এর ফলে বাজারের বাইরে থাকা কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হতে আরও নিরুৎসাহী হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে সরকারসহ সবাই একটি কার্যকর বন্ড মার্কেট গড়ে তোলার কথা বলে আসলেও বাজেটের কিছু প্রস্তাবের কারণে এই বাজারের উন্নয়ন ব্যাহত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
দেশের বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে জিরো কুপন বন্ডে বিদ্যমান কর সুবিধা অন্যান্য বন্ডেও দেওয়ার সুপারিশ করেছিল বিএসইসি। পাশাপাশি এই সুবিধা শুধু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমিত না রেখে সব শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের (আর্থিক, অ-আর্থিক, ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক) এর আওতায় নিয়ে আসারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কর সুবিধার পরিধি না বাড়িয়ে উল্টো জিরো কুপন বন্ডের বিদ্যমান কর সুবিধাও প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এর বাইরে আগামী অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে বেশ কিছু প্রস্তাব করেছিল ডিএসই,যার কোনোটিরই প্রতিফলন ঘটেনি ঘোষিত বাজেটে। এসব বিষয় তুলে ধরে পুঁজিবাজার অনুকূল কিছু ব্যবস্থার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করতে বিএসইসিকে অনুরোধ জানিয়েছে ডিএসই।