প্রতিষ্ঠার ২৫ বছরে এসেও ব্যবসায় বেহাল দশা দেশের দ্বিতীয় শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই)। এতো দীর্ঘসময়ে স্টক এক্সচেঞ্জটির পরিচালনা পর্ষদসহ ম্যানেজমেন্টে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সিএসইর ব্যবসায় কোন উন্নতি হয়নি। এখনো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শীর্ষ এক ব্রোকারের থেকে সিএসইর মোট লেনদেন কম হয়।
১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু করা সিএসইর ব্রোকার সংখ্যা ১৪৮টি। যেগুলোর মোট লেনদেনের চেয়ে ডিএসইর শীর্ষ ব্রোকার হাউজের লেনদেনের পরিমাণ বেশি। এই অবস্থার কারনে অনেকেই সিএসই প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। তারা মনে করেন এটি ডিএসইর সঙ্গে একীভূতকরন করা উচিত। এতে ব্যয় কমে আসবে। আর সিএসইর শেয়ারহোল্ডাররা লাভবান হবেন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সিএসইর লেনদেনে কোন উন্নতি না হওয়াসহ কিছু কারনে ডিএসইর সঙ্গে একীভূতকরন নিয়ে মৌখিকভাবে কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। তবে ডিএসই অনেক বেশি সস্তায় সিএসইর সঙ্গে একীভূতকরন হতে চায়। তারা ডিএসইর ১০টি শেয়ারের বিপরীতে ১টি শেয়ার দিতে চায়। তবে সিএসই ২টি শেয়ারের বিপরীতে ১টি চায়। এ নিয়ে বনিবনা না হওয়ায়, এখনো সেদিকে যায়নি।
শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পাশাপাশি বা একাধিক স্টক এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে যেখানে লেনদেন বেশি, বিনিযোগকারী বেশি, সেখানে অন্যরাও সেদিকে চলে যায়। যেমনটি ডিএসইর ক্ষেত্রে হয়। আবার ডিএসইর শাখা চিটাগাংয়েও আছে। সিএসইতে গুটি কয়েক ব্রোকারেজ হাউজের মালিকেরা ছাড়া কেউ লেনদেনই করে না। এটা একীভূতকরন হয়ে যেতে পারত। ডিএসই করে নাই। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকও একীভূতকরনের জন্য বলেছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন দুইটা স্টক এক্সচেঞ্জ দরকার নাই। যখন কাগজে শেয়ার ছিল, তখন লোকাল স্টক এক্সচেঞ্জ দরকার ছিল। এখন যেহেতু ডিমিউচ্যুয়ালাইজড হয়ে গেছে ও কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, তাই আর দরকার নাই। কিন্তু ডিএসই করে নাই। এছাড়া প্রত্যেকের মধ্যে মনস্তাত্তিক সমস্যা আছে। ওখানে (সিএসই) কিছু বোর্ডের লোকজন আছে, তারা বোর্ড মিটিং ফি পাচ্ছে। এছাড়া হোটেল আগ্রাবাদে থাকা যায়, প্লেনের ভাড়া পাওয়া যায়। একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ৫-৬ লাখ টাকা পাচ্ছে। একীভুতকরনে এগুলোতো বন্ধ হয়ে যাবে। তাই তাদেরও একটা অংশ একীভূতকরন চায় না।
গত ৬ কার্যদিবসের লেনদেনে দেখা গেছে, ৬ কার্যদিবসের মধ্যে ৫ কার্যদিবসেই সিএসইর থেকে ডিএসইর শীর্ষ এক ব্রোকারেজ হাউজের লেনদেন বেশি হয়েছে। বাকি ১ কার্যদিবস ব্লকে অস্বাভাবিক লেনদেন হওয়ায় সিএসই এগিয়ে ছিল।
দেখা গেছে, গত ৭ জুন (রবিবার) ডিএসইর ব্রোকার এবি সিকিউরিটিজে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়। ওইদিন হাউজটিতে ১৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছিল। আর সিএসইর মোট লেনদেন হয়েছিল ৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকার। এরপরে ৮ জুন ডিএসইর ব্র্যাক ইপিএলে সর্বোচ্চ ৭০ কোটি ৪৩ লাখ টাকার ও সিএসইর মোট ১ কোটি ৫১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছিল। এছাড়া ১০ জুন ডিএসইর ব্র্যাক ইপিএলে ১৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকার ও সিএসইতে ২ কোটি ২২ লাখ টাকার এবং ১১ জুন ডিএসইর মাল্টি সিকিউরিটিজে ১৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকার ও সিএসইতে ১২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছিল।
এ বিষয়ে সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন-উর-রশীদ বলেন, সিএসই ও ডিএসইর মধ্যে লেনদেনে পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু সিএসই আর্থিকভাবে পিছিয়ে নেই। বরং সিএসইর আর্থিক অবস্থা ডিএসইর থেকে অনেক ভালো। এছাড়া সুযোগ সুবিধা বা সক্ষমতায় কোন কোন ক্ষেত্রে সিএসই এগিয়ে রয়েছে ডিএসই থেকে। তাই একীভূতকরনের প্রশ্ন আসবে কেনো। এ নিয়ে কখনো আলোচনা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমি আসার আগে কখনো এ নিয়ে আলোচনা হলেও হতে পারে।
তিনি বলেন, লেনদেনের এই অবস্থা ঐতিহাসিকভাবে হয়ে আসছে। এটা রাতারাতি পরিবর্তন হবে না। এজন্য নীতিগত সহযোগিতা লাগবে, রেগুলেটরের সহযোগিতা লাগবে। আর আমাদের যা কাজ করার, তা আমরা করতেছি।
ডিএসইর এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা সিএসইকে আমাদের একটি ব্রোকারেজ হাউজের থেকে বেশি কিছু মনে করি না। ওটার এগিয়ে যাওয়া বা উন্নতি করার মতো আপাত দৃষ্টিতে কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ওটার চেয়ে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ ও ব্র্যাক ইপিএলের ব্যবসা ভালো। এই অবস্থায় সিএসইর সঙ্গে ডিএসই একীভূতকরনে রাজি হবে বলেও মনে হয় না।
নিম্নে গত ৬ কার্যদিবসে ডিএসইর সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া ব্রোকারেজ হাউজ ও সিএসইর মোট লেনদেনের তথ্য তুলে ধরা হল-
গত সপ্তাহের ৯ জুন সিএসইতে ব্লকে অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছিল। যাতে করে ওইদিন ডিএসইর শীর্ষ ব্রোকারের থেকে সিএসইর লেনদেন বেশি হয়েছিল। ওইদিন সিএসইর মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আর ডিএসইর মাল্টি সিকিউরিটিজে সর্বোচ্চ ১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছিল।
এদিকে গত সপ্তাহের ৬ কার্যদিবসে ডিএসইর শীর্ষ ব্রোকারগুলোতে ১৪১ কোটি ৫০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যার পরিমাণ সিএসইতে ছিল ১০১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ সিএসইতে ডিএসইর এক ব্রোকারের থেকেও ৩৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা বা ২৮ শতাংশ কম লেনদেন হয়েছে।
লেনদেনটা শুধু স্টক এক্সচেঞ্জের উপর নির্ভর করে না জানিয়ে সিএসইর এমডি বলেন, এ বিষয়ে আমরা বিএসইসির সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলোচনা করেছি। লেনদেন বাড়ানোর জন্য করনীয় নিয়ে কমিশনে প্রস্তাব দিয়েছি। তারা আমাদের প্রস্তাব বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। যা বাস্তবায়নে লেনদেন অনেকাংশে বাড়বে বলে মনে করছি।
একটি মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, এই মুহূর্তে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারব না।