1. [email protected] : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারবার্তা : nayan শেয়ারবার্তা
  3. [email protected] : news uploder : news uploder
বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কের নাম ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড
বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৩৩ এএম

বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কের নাম ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড

  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০২০
Western-marine

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। চলতি মূলধন সংকট, নতুন করে অর্ডার না পাওয়া, খুবই ধীরগতিতে চলা প্রকল্পের কাজ, শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। করোনা সংক্রমণের প্রভাবে গত আড়াই মাস ধরে বন্ধ প্রতিষ্ঠানটির কারখানা; সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমিয়েছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এতে পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম। এ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের শেষ পর্ব প্রকাশিত হচ্ছে আজ

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড এখন বিনিয়োগকারীদের কাছে আতঙ্কের নাম। প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারে আসে ২০১৪ সালে। সে সময়ের তুলনায় শেয়ারটির দাম কমছে গড়ে ৮৭ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে চলতি মূলধন সংকট, ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে চাপ, নতুন করে অর্ডার না পাওয়া, চলমান প্রকল্পে খুবই ধীরগতি, শ্রমিক অসন্তোষ প্রভৃতি প্রকট আকারের ধারণ করেছে।

এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে গত আড়াই মাস বন্ধ আছে প্রতিষ্ঠানটির কারখানা। এর মধ্যে আবার নতুন করে অর্থ সংগ্রহের জন্য রাইট শেয়ার অনুমোদন চেয়ে প্রতিষ্ঠানটি আবেদন করে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে। সব মিলিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসই’র লেনদেন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, দেশের দুই পুঁজিবাজারের ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড নিবন্ধিত হয় ২০১৪ সালে। সে সময় ৩৫ টাকা দর ছিল শেয়ারটির। যদিও পরে এর দাম বেড়ে ৯০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। আর গতকাল ডিএসইতে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয় ১১ টাকা ৫০ পয়সায়। এ হিসাবে সর্বোচ্চ দামের তুলনায় শেয়ারটির দর কমেছে ৭৮ টাকা ৫০ পয়সা বা ৮৭ দশমিক ২২ শতাংশ। তবে ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়ায় দাম কমছে না শেয়ারটির। তা না হলে শেয়ারটির দাম অভিহিত দরের নিচে চলে যেত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে গত এক বছরের মধ্যে এ শেয়ারের সর্বোচ্চ মূল্য ছিল ১৮ টাকা ৭০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন মূল্য ছিল ৯ টাকা ৬০ পয়সা। এর আগের বছর (২০১৮) এ শেয়ারের সর্বোচ্চ মূল্য ছিল ২৯ টাকা ৯০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন মূল্য ছিল ১৩ টাকা ৩০ পয়সা। তার আগের বছর (২০১৭) ছিল ৪৭ টাকা ৯০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ২১ টাকা ৮০ পয়সা।

ওয়েস্টার্ন মেরিন সূত্রমতে, একপক্ষ গত বছর ১৮ জুন সাখাওয়াত হোসেনকে অপ্রত্যাশিতভাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়। আর দায়িত্ব দেওয়া হয় অনভিজ্ঞ ক্যাপ্টেন সোহেল হাসানকে। এছাড়া ওয়েস্টার্ন মেরিনের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম একাধিকবার প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে প্রতিবারের মতো তাকে অনুরোধ করে রাখা হয়। আরও কয়েকজন পরিচালক পর্ষদ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করেছেন। আর সম্পর্ক বিনষ্ট হওয়া এবং নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যর্থতায় কোম্পানির অর্থ উপদেষ্টা অরূপ চৌধুরী, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন ও সচিব সাহাদাত হোসেন চাকরি ছেড়ে দিয়ে অন্য জায়গায় চাকরি নেন।

ওয়েস্টার্ন মেরিনের একাধিক সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা এ প্রতিবেদককে বলেন, বাংলাদেশের রফতানিমুখী জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মধ্যে শীর্ষে অবস্থানকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ২০০০ সালে যাত্রা শুরু হলেও পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত হয় ২০১৪ সালে। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড আইপিওতে আসায় অনেক খুশি হয়েছিলাম। তবে বিপুল পরিমাণে পুঁজি সংগ্রহের পরও প্রতিষ্ঠানটির নাম কোনো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো খেলাপি তালিকায় উঠে আসে। এখন শুনছি প্রতিষ্ঠান বন্ধ, শ্রমিকদের বেতন বকেয়া আছে। এভাবে হলে তো ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

এদিকে চলতি মাসসহ মোট ১০ মাস বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না কোম্পানিটির কর্মকর্তারা। আর শিপইয়ার্ড শ্রমিকদের ১৭ মাস ওভারটাইম মজুরিসহ চার মাসের বকেয়া আছে। সব মিলিয়ে এসব শ্রমিক ও কর্মকর্তার বকেয়া বেতন-ভাতার পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি টাকা। যদিও গত ঈদের আগে কর্মরত কর্মকর্তাদের দাবি ছিল এক মাসের বেতন পরিশোধ করলে তারা আবারও কাজে যোগ দেবেন। এ নিয়ে একাধিকবার উভয় পক্ষের মধ্যে বৈঠক হলেও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কোনো সমাধান দিতে পারেনি।

তারা বলছেন, এ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে অনেক লোকসান গুনেছি। মনে হচ্ছে এক সময়ে গিয়ে এটি ‘নাই-নাই’ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। তাই রাইট শেয়ারের ব্যাপারে বিএসইসিকে আরও কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে। যেহেতু কোম্পানিটিতে ৫০ শতাংশ শেয়ারের মালিক সাধারণ বিনিয়োগকারীরা, ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীর ভবিষ্যৎ জড়িত। তাই আমাদের পুঁজির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিএসই ও সিএসইর এসব বিষয়ে ভালো করে তদন্ত করে সঠিক তথ্য ও সিদ্ধান্ত নেওয় উচিত।

কবির আহমদ নামে একজন বিনিয়োগকারী বলেন, ওয়েস্টার্ন মেরিনের উদ্যোক্তারা ভালো মানুষ নন। তাদের ব্যর্থতা আর অদক্ষতায় ডুবছে এ প্রতিষ্ঠান। আর বেড়েছে ব্যাংকঋণ। তারা প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তারা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সব সময় ঠকিয়েছেন। পাশাপাশি এখন কোম্পানির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঠকাচ্ছেন। নিয়মিত তাদের বেতন-বোনাস দেওয়া হয় না। এখন আবার রাইট শেয়ারের জন্য চেষ্টা করছেন। এমনিতে ৫০-৫৫ টাকার শেয়ার এখন ১১ টাকা। রাইট হলে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন বাড়বে। হয়তো কিছু ব্যাংকঋণ শোধ হবে। কিন্তু শেয়ারের বাজার দাম তখন হবে সাত-আট টাকা। এতে বিনিয়োগকারীরা আরও লোকসানে পড়বেন। আসলে এ প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ খুবই অন্ধকার।

এদিকে গত শনিবার সর্বশেষ বৈঠকে ব্যবস্থাপনা পক্ষে সিঙ্গাপুর থেকে অনলাইন মাধ্যমে সংযুক্ত হন ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল হাসান এবং সরাসরি উপস্থিত ছিলেন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুবিন ও পরিচালক (অপারেশন) এবিএম ফজলে রাব্বী। এ সময় তারা প্রতিবারের মতো কোনো সমাধান দিতে পারেননি।

কিছুদিন আগে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি একজন পরিচালক। তবে এ প্রতিষ্ঠানের সাধারণ বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেশি। যেহেতু বোর্ডে আমার মূল্যায়ন নেই, সেহেতু আমি আমরা নিজের প্রতিষ্ঠান নিয়ে এখন চিন্তা-ভাবনা ও কাজ করছি। এছাড়া এ প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার কিছু করারর সুযোগ নেই। এখন নতুন এমডিসহ প্রভাবশালী পরিচালকরা চিন্তা-ভাবনা করবেন। তারাই ভালো জানেন কোম্পানির ভবিষ্যৎ কী হবে।

এ বিষয়ে জানতে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেননি। পরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহের হাসানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। একইভাবে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মুবিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে সাড়া দেননি।

পরে কোম্পানিটির অর্থ উপদেষ্টা অরূপ চৌদুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এমডি সিঙ্গাপুরে। আমরা নিজেরাই গত কয়েক মাস বেতন-ভাতা পাচ্ছি না। আর শিপইয়ার্ডে কাজও বন্ধ আছে। করোনার এ কঠিন সময়ে কারও বেতন হচ্ছে না। আমরা অনেক কঠিন সময় পার করছি। এ পরিস্থিতি কবে ভালো হবে, তা বোঝা যাচ্ছে না।’

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:

ভালো লাগলে শেয়ার করবেন...

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ