নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য রেমডেসিভির ইনজেকশন বাজারজাত শুরু করেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দেশের অন্যতম শীর্ষ ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। কোম্পানিটির উৎপাদিত রেমডেসিভিরের ব্র্যান্ড নাম বেমসিভির।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস দেশে প্রথম কোম্পানি হিসেবে রেমডেসিভির বাজারজাত শুরু করল।
বৃহস্পতিবার (২১ মে) ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বেমসিভির ব্র্যান্ড নামে বেক্সিমকো ফার্মার রেমডেসিভির ইনজেকশন করোনায় জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমতি দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে কোম্পানিটি এই ওষুধ বাজারজাত শুরুর ঘোষণা দেয়।
করোনার দুর্যোগকালে একটি ভালো খবরও দিয়েছে বেক্সিমকো ফার্মা। কোম্পানিটি ঘোষণা দিয়েছে, দেশের সরকারি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সব বেমসিভির বিনামূল্যে (Free) সরবরাহ করবে কোম্পানিটি। ফলে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীদেরকে এই ওষুধ কিনতে হবে না।
সরকারি হাসপাতালে সরবরাহের অংশ হিসেবে আজ বেক্সিমকো ফার্মার পক্ষ থেকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম ব্যাচের ১ হাজার শিশি রেমডেসিভির হস্তান্তর করা হয়েছে। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন এমপি এগুলো হস্তান্তর করেছেন।
বেমসিভির হস্তান্তর অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সরকারি হাসপাতালে বেক্সিমকোর রেমডেসিভির (রেমসিভির) বিনামূলের রোগীদের সরবরাহ করার কথা জানান।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মোঃ আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মোঃ আলী নূর, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ, কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ শহীদুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ, গত ৩ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর দেশের ছয়টি কোম্পানিকে রেমডিসিভির উৎপাদন করার প্রাথমিক অনুমতি দেয়। কোম্পানিগুলো হচ্ছে-স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস ও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। এদের মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস ওষুধটির উৎপাদন শুরু করেছে। তবে এসকেএফ এখনো ওষুধটির বাজারজাত শুরু করেনি।
রেমডেসিভির হচ্ছে মার্কিন কোম্পানি গিলিয়েড সায়েন্সেস ইনকরপোরেশনের উদ্ভাবিত একটু ওষুধ। এটি মূলত ইবোলা ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য উদ্ভাবন করা হয়েছিল। তবে এবার করোনাভাইরাসের প্রকোপে কোম্পানিটি করোনার চিকিৎসায়ও ওষুধটি কিছু কার্যকারিতা পেয়েছে বলে দাবি করেছে। তাদের দাবি অনুসারে, এই ওষুধ ব্যবহারে করোনামুক্ত হতে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু সময় কম লাগে, আর মৃত্যুর আশংকাও কমে আস।
এখন পর্রয়ন্ত বিশ্বে করোনার চিকিৎসার কার্যকর কোনো ওষুধ আবিস্কৃত না হওয়ায় জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় রেমডেসিভির ব্যবহারের প্রাথমিক অনুমতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)। এছাড়া জাপানের স্বাস্থ্য প্রশাসনও এই ওষুধ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এর পরপরই ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের অনেক দেশে রেমডেসিভির উৎপাদনের তোড়জোর শুরু হয়। তবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসই বিশ্বে গিলিযেড সায়েন্সেসের বাইরে প্রথম বেমসিভির নামে জেনেরিক রেমডেসিভির উৎপাদন করেছে।
জানা গেছে, করোনায় মূমূর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রে বেমসিভির ব্যহার করা হবে। একজন রোগী সুস্থতার জন্যে ৫ থেকে ১১ শিশি (Vial) রেমডিসিভির প্রয়োজন হবে। তবে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীরা এই ওষুধ বিনামূল্যেই পাবেন।
হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান এমপি বলেন, বেক্সিমকো ফার্মা শুধু কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য সরকারের নির্দিষ্ট হাসপাতালগুলোতে এই ওষুধ সরবরাহ করবে। কোনো ফার্মেসিতে এই ওষুধ পাওয়া যাবে না।
শেয়ারবার্তা / হামিদ