প্রাণঘাতী করোনারভাইরাস (কভিড-১৯) বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, তথ্য-প্রযুক্তি সেবা রপ্তানি, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, আউটসোর্সিং খাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। এ কারণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের রপ্তানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনায় এরই মধ্যে বাতিল হয়েছে ৮০ শতাংশ দেশীয় সফটওয়্যার রপ্তানির আদেশ। অভ্যন্তরীণ বাজার হারিয়েছে ৫০ শতাংশের মতো। বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে অর্ধেকেরও বেশি প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশের সফটওয়্যার খাত। করোনার প্রভাব মোকাবেলায় সরকারের কাছে এক হাজার ৯৩০ কোটি টাকার অনুদান চেয়েছে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ পাঁচটি সংগঠন বিসিএস, বেসিস, আইএসপিএবি, বাক্য ও ই-ক্যাব।
সূত্র মতে, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও এসংক্রান্ত একটি আবেদনপত্র পাঠানো হয়েছে। আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি সহজ শর্তে ঋণ এবং এন্টারপ্রেনারশিপ সাপোর্ট ফান্ড (ইএসএফ) থেকে অর্থপ্রাপ্তি সহজীকরণের প্রস্তাবও করা হয়েছে ওই আবেদনে।
পাঁচ সংগঠনের সভাপতি স্বাক্ষরিত চিঠিতে এপ্রিল থকে সেপ্টেম্বর মাসের আংশিক বেতন ও অফিসভাড়া বাবদ এই খাতের কর্মীদের বেতন ও অফিসের ভাড়া বাবদ এক হাজার ৯৩০ কোটি টাকা অনুদান চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঋণ গ্রহণের এক বছর পর থেকে ২ শতাংশ সুদে জামানতবিহীন ঋণ প্রদান এবং নিয়োজিত ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখতে ইএসএফ তহবিল থেকে অর্থপ্রাপ্তিতে সম্পত্তি বন্ধকিসহ বিদ্যমান জটিলতা বাদ দিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে অনুরোধ করা হয়েছে।
আমরা গত বছর তথ্য-প্রযুক্তি খাত থেকে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আয় করেছিলাম। কিন্তু এবার আমাদের ৮০ শতাংশ অর্ডার বাতিল হয়ে গেছে। স্থানীয় বাজারেও ৫০ শতাংশ হারানোর শঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে। সৈয়দ আলমাস কবীর, সভাপতি, বেসিস
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, ‘আগামী ছয় মাসের জন্য কর্মীদের বেতন এবং অফিসভাড়ার একটি অংশ অনুদান হিসেবে চেয়েছি। এ ছাড়া ৫৬০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করতে বলেছি, যেখান থেকে বেসিস সদস্যদের জন্য ২ শতাংশ সুদে জামানতবিহীন ঋণ প্রদানের অনুরোধ করেছি। এই সংকটকালীন ডিজিটাইজেশনে সরকারি কাজগুলো আমাদের সদস্যরা করার আরো সুযোগ পেলে কিছুটা হলেও চাপ কমবে।’
বেসিস সভাপতি বলেন, তথ্য-প্রযুক্তি ভিন্ন ধরনের খাত, যেখানে উদ্যোক্তাদের জামানত রাখার মতো (কারখানা, জমি) সম্পদ নেই। ইএসএফ ঋণের শর্ত শিথিল করে দ্রুত ঋণ প্রদানের কথা বলেছি।
বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ইউওয়াই সিস্টেম্স লিমিটেডের সিইও ফারহানা এ রহমান বলেন, ‘বিদেশি গ্রাহকদের বেশির ভাগ অর্ডার বাতিল হয়েছে। লকডাউন পরিস্থিতির আগেই তারা বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে। এখন বাসায় বসে দেশীয় বাজারে ও আমাদের সফটওয়্যার ক্লায়েন্টদের লাইভ স্ট্রিমিং সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছি। সামনের দিনগুলো কী করে চলবে তাই ভাবছি।’
হার্ডওয়্যার : এদিকে করোনার থাবায় দেশের কম্পিউটার হার্ডওয়্যার খাত দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি শাহিদ-উল-মুনীর। তিনি হার্ডওয়্যার শিল্প খাতকেও জরুরি সেবার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের কাছে ৬৮০ কোটি টাকার অনুদান ছাড়াও সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা চেয়েছে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার সংগঠনটি।
আউটসোর্সিং : ইউরোপ-আমেরিকাসহ আউটসোর্সিং সেবা গ্রহণকারী প্রধান দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় এসব কাজ অনেকটাই বন্ধ।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্য) মহাসচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের ক্লায়েন্টরা একের পর এক কার্যাদেশ বাতিল করছে। বিপিও খাতের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ৫০ শতাংশের বেশি বন্ধ হয়ে যাবে। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া আমরা টিকে থাকতে পারব না।’
শেয়ারবার্তা / মিলন