২০১০ সালে পুঁজিবাজারে মহাধসের প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুনর্গঠন করা হয়। ২০১১ সালের ১৫ মে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ পান ড. এম খায়রুল হোসেন। পুঁজিবাজারের দায়িত্ব নিয়ে প্রথমদিনেই তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাবেন, বাজারে স্থিতিশীলতা আনবেন। না পারলে দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। তারপর ৯ বছর চলে গেছে। এর মধ্যে অনেক কিছুরই বদল হয়েছে। আগামী ১৪ মে এই কমিশনের সদস্য ও চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নতুন করে দায়িত্বরতদের মেয়াদ বাড়ানোর কোন আইনী সুযোগ না থাকায় চলতি মাসেই নতুন কমিশন পাচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার।
৯ বছরে সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও কমিশনারগণ কী কী কাজ করেছেন। বিএসইসির ওয়েবসাইটে বলা আছে, স্বচ্ছতা, স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলার মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজারকে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে এম খায়রুল ইসলাম নিরলস কাজ করেছেন। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বিএসইসির সংস্কার করেছেন।
খায়রুল হোসেনের দীর্ঘ নয় বছরের শাসনামলে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে অনেক আইন ও নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। নেয়া হয়েছে অনেক উদ্যোগও।
তবে অনেক দিন ধরে পুঁজিবাজারে দরপতন চলছে। এতে পুঁজি হারাচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। আস্থা তলানিতে। টানা বিক্ষোভ করছেন বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজারের কারসাজি চক্রটি এখন আরও শক্তিশালী ও সক্রিয়। বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তারাই। সূচকের ওঠানামা খুবই নিয়ন্ত্রিত। পতন তীব্র হলে হস্তক্ষেপ করে বাজারের সূচক এক বা দুই দিনের জন্য বাড়ানো হলেও এরপরে আবার পতন শুরু হয়। এককথায় বলা যায়, পুঁজিবাজারের ওপর কোনো আস্থা নেই বিনিয়োগকারীদের।
আবার বাজারে আইনের প্রয়োগেও আছে নানা ঘাটতি। তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ এবং পরিচালকদের ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক হলেও অনেক কোম্পানিই তা মানে না। কিন্তু বিএসইসি তা বাস্দেতবায়ন করতে পারেনি।
প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে আসা মানহীন শেয়ারের দর যেমন অভিহিত মূল্যের নিচে, সেকেন্ডারি বাজারেও তেমনি চলে নানা কারসাজি। এর মধ্যেই আবার গড়ে উঠেছে প্লেসমেন্টের এক অবৈধ রমরমা বাজার। এই শেয়ারও বাজারে আসার আগেই একাধিক হাতবদলের ঘটনা ঘটে।
করোনা ভাইরাসের কারণে পুঁজিবাজারের অবস্থা বিশ্বব্যাপী এখন তথৈবছ। বিশ্বজুড়ে চলছে পুঁজিবাজারে পতনের মাতম। তারপরও বিনিয়োগকারীদের বড় প্রত্যাশা, খায়রুল হোসেনের বিদায়ের পর পুঁজিবাজার পাবে নতুন চেয়ারম্যান, নতুন প্লাটফর্ম। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্যান্য খাতের মতো পুঁজিবাজারে আাসবে নতুন গতি, নতুন উদ্যোগ। বিনিয়োগকারীদের মনে উদীপ্ত হবে নতুন এক প্রত্যাশার, নতুন একটি ভোরের।
শেয়ারবার্তা / আনিস