পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত স্বল্প মূলধনী কোম্পানির বিধিমালার আবার পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ জন্য ‘কোয়ালিফায়েড ইনভেস্টর অফার বাই স্মল ক্যাপ কোম্পানিজ’ শীর্ষক এই বিধিমালার কিছু বিধির সংশোধনী অনুমোদন করা হয়েছে।
বুধবার (২৯ এপ্রিল) বিএসইসির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৭২৫তম কমিশন সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। সভা শেষে বিএসইসির নির্বহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি জানান, কমিশন সভায় ‘কোয়ালিফায়েড ইনভেস্টর অফার বাই স্মল ক্যাপ কোম্পানিজ’ রুলের সংশোধনী প্রস্তাব কিছু পরিবর্তন সাপেক্ষে অনুমোদন করা হয়েছে। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষে জনমত যাচাইয়ের জন্য এটি পত্রিকা এবং কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এর আগে স্বল্প মূলধনের কোম্পানির জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (কোয়ালিফায়েড ইনভেস্টর অফার বাই স্মল ক্যাপ কোম্পানিজ) রুলস-২০১৬ প্রণয়ন করে। তবে ২০১৮ সালে এর কিছু বিধির সংশোধন আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এরপর ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) স্মল ক্যাপ মার্কেট (এসএমই) প্লাটফর্ম উদ্বোধন করে। ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
ওই বছর (২০১৯ সাল) ডিসেম্বরের শেষের দিকে এই প্লাটফর্মে তালিকাভুক্তির জন্য প্রসপেক্টাস জমা দেয় স্বল্প মূলধনী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মিরা অ্যাগ্রো ইনপুটস লিমিটেড৷
এরপ আগে ২০১৬ সালে বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায় এমন স্বল্প মূলধনী কোম্পানির জন্য উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে ‘স্মল ক্যাপিটাল প্লাটফর্ম’ নামে আলাদা বাজার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।
সে সময় বিএসইসি থেকে জানানা হয়, ‘স্মল ক্যাপিটাল প্লাটফর্ম’ নামের আলাদা বাজারে তালিকাভুক্তির জন্য কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা এবং তালিকাভুক্তির পর পরিশোধিত মূলধন কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা থাকতে হবে। একই সঙ্গে সর্বোচ্চ পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকার নিচে থাকতে হবে।
স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির জন্য কোয়ালিফায়েড ইনভেস্টর অফারের (কিউআইও) মাধ্যমে পুঁজি উত্তোলন করতে হবে। আর স্বল্প মূলধনী কোম্পানি এই বাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারবে। এই বাজারে শুধু কোয়ালিফায়েড ইনভেস্টররা লেনদেন করতে পারবেন।
কোয়ালিফায়েড ইনভেস্টর বলতে বিনিয়োগ-সংক্রান্ত সম্যক ধারণা রয়েছে এমন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও উচ্চ নিট সম্পদধারী ব্যক্তিকে বোঝায়। কোয়ালিফায়েড ইনভেস্টর চিহ্নিত করতে সিডিবিএল ভিন্ন ধরনের বিও হিসাব প্রণয়ন করবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এই বাজার উন্মুক্ত থাকবে না। বিদ্যমান স্টক ব্রোকারদের মাধ্যমে বাজারে লেনদেন পরিচালিত হবে।
এই বাজারে ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে পারবে না এবং শেয়ারধারীদের শেয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত লক-ইন থাকবে। বাজারে লেনদেনের তারল্য বজায় রাখার জন্য ইস্যুয়ার কোম্পানিকে কমপক্ষে তিন বছরের জন্য মার্কেট মেকার নিয়োগ করতে হবে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাজারের কোম্পানিগুলোর শেয়ার ডিমেটারিয়ালাইজ ফরমে হবে অর্থাৎ শেয়ার কাগুজে হতে পারবে না। শেয়ার লেনদেন হবে ইলেকট্রনিক ট্রেডিং প্লাটফর্মে এবং লেনদেন নিষ্পত্তির সময় হবে স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বাজারের মতো।
স্বল্প মূলধনী কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য ন্যূনতম ফি ও অন্যান্য খরচ ধার্য করা হবে। তবে কমপ্লায়েন্সের বাধ্যবাধকতা বর্তমান প্রচলিত আইপিওর চেয়ে হ্রাস করা হবে। এক্সচেঞ্জগুলো কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেবে।
এদিকে স্বল্প মূলধনী কোম্পানির কিছু বিধিমালা সংশোধনী অনুমোদনের পাশাপাশি বুধবারের সভায় কমিশনের স্বাধীন পরিচালকদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার মানদন্ড নির্ধারণ করে একটি স্বতন্ত্র পরিচালক প্যানেল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই সঙ্গে অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট রুল-২০১৫ অনুমোদন এবং ডেবিট সিকিউরিটিজ রুল-২০২০’র খসড়া জনমত যাচাইয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষে অফিস খোলার পর এসব বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
শেয়ারবার্তা / আনিস