চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই’১৯-সেপ্টেম্বর’১৯) বড় লোকসানে পড়েছে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি এসিআই লিমিটেড। প্রথম প্রান্তিকে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতি শেয়ারে ৫ টাকা ৯৯ পয়সা লোকসান দিয়েছে কোম্পানিটি। সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর (Subsidiary Company) আয়/লোকসানসহ এসিআই লিমিটেডের মোট লোকসান হয়েছে ৩৯ কোটি ২২ লাখ টাকা।
কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলেছেন, বেশ কিছু কারণে এবার তাদের লোকসান হয়েছে। এ লোকসান সাময়িক। কারণ তারা উদ্ভুত সমস্যাগুলোর সমধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন। এমনকি বিদ্যমান ব্যবসায়িক মডেলে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সব মিলিয়ে আগামী এক থেকে দুই প্রান্তিকের মধ্যে অবস্থার উন্নতি হওয়া শুরু হবে।
সোমবার প্রথম প্রান্তিক প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কোম্পানি কতৃর্পক্ষ এ আশ্বাস দেন। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এসিআই সেন্টারের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এসিআই লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এম আরিফ দৌলা।
এসিআই লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ দৌলা বলেন, গত প্রান্তিকে লোকসান হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ ছিল। তবে তিনটি বিষয় এতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। এগুলো হচ্ছে- ব্যাংকের সুদ হারের উর্ধগতি, সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে বড় অংকের বিনিয়োগ এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের অস্থিরতা।
তিনি বলেন, এসিআই এর ব্যবসা অনেকটাই পুঁজিনির্ভর ব্যবসা। এই ব্যবসার জন্য ব্যাংক অর্থায়নে ব্যাপকভাবে নির্ভর করতে হয়। তাই ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিটির পরিচালন ব্যয়ও অনেক বেড়ে গেছে। গত প্রান্তিকে কোম্পানিকে ৭০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসিআই হেলথ কেয়ারে বড় অংকের বিনিয়োগ করেছে এসিআই। এতে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ও সর্বোচ্চ মানের ওষুধ কারখানা নির্মাণ করা হচ্ছে। এই কারখানায় উৎপাদিত ওষুধ যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোর বাজারে রপ্তানি করা হবে।
লোকসানে বড় ভূমিকা রেখেছে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের অস্থিরতাও। টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে ওষুধ ও বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ব্যয় বেড়ে গেছে।
এসিআই লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলা বলেন, এর আগে ২০১২ সালে বিভিন্ন কারণে তাদেরকে লোকসান দিতে হয়েছিল। কিন্তু সফলভাবে সেখান থেকে উত্তরণ হয়েছে। এবারের সংকটও সাময়িক। তারা এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে কোম্পানিটিকে অনেক দূর নিয়ে যাবেন।
এসিআই লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এম আরিফ দৌলা কোম্পানির ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও সম্ভাবনা তুলে ধরে বলেন, নানা কারণে কোম্পানির বিনিয়োগকারী বা শেয়ারহোল্ডারদের একটু কষ্ট হচ্ছে। একটু ধৈর্য ধরলে তারা অনেক বড় রিটার্ন পাবেন। কারণ তারা (কোম্পানি কর্তৃপক্ষ) কোম্পানির ভ্যালু বাড়ানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদ হার বেড়ে যাওয়াসহ নতুন যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, সেটি মোকাবেলায় টেকসই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ব্যাংক ঋণের নির্ভরতা কমাতে তারা কোম্পানিতে প্রাইভেট ইক্যুইটি নিয়ে আসার জন্য কাজ করছেন। অনেকগুলো ফান্ড বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। কয়েকটির সঙ্গে আলোচনায় বেশ অগ্রগতিও আছে। তবে তারা একটু সময় নিয়ে বিষয়টি চুড়ান্ত করতে চান, যাতে কোম্পানি সর্বোচ্চ লাভবান হয়।
এসিআই হেলথ কেয়ারের ওষুধ কারখানাটি চালু হয়ে গেলে এসিআইয়ের ব্যবসায় নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশের বাজারে কোম্পানির অবস্থান সংহত হবে। বর্তমানেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ রপ্তানি করছেন। কিন্তু কিছু টেকনিক্যাল কারণে ভারত থেকে ওই রপ্তানি করতে হচ্ছে। এসিআই হেলথ কেয়ারের কারখানাটি হয়ে গেলে সরাসরি বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা যাবে। ফলে রপ্তানিতে অনেক বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে।
বহুল আলোচিত ঘটনা এবং তাদের লোকসান সাবসিডিয়ারি কোম্পানি স্বপ্নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বপ্নের লোকসান হচ্ছে ঠিক এত কোম্পানির আয়ে বা লোকসানে খুব বেশি প্রভাব ফেলছে না। বর্তমানে এই খাতে দেশে ২ লাখ টাকার বাজার রয়েছে। যেখানে স্বপ্ন ব্যবসা করছে মাত্র ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার। এখন পর্যন্ত আমরা সারাদেশে আমাদের শাখা তৈরি করতে পারেনি। এজন্য এখনও সময় লাগবে। স্বপ্নের মাধ্যমে আমাদের পণ্যের সাপ্লাই চেইন তৈরি হয়েছে। এখন এটাকে জাতীয় পর্যায়ে নিতে হবে। সে পর্যন্ত লোকসান হলেও এর পরবর্তীতে তার আয়ের পরিমাণ হবে অনেক বেশি। আমরা আশা করছি আগামী ২০৩০ থেকে ২০৩৫ সালে এই কোম্পানি ২৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করবে।
শেয়ারবার্তা / হামিদ