বীমা খাতে কোম্পানির এজেন্ট, উন্নয়ন অফিসার এবং উন্নয়ন ম্যানেজার মিলে তিন ক্যাটাগরিতে কমিশনে ৮ লাখের বেশি মানুষ কাজ করছেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ২৫ মার্চ থেকে তারা ঘরে আছেন। কোনো ধরনের আয় নেই।
বীমা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করছে না। ফলে তারা অসহায়ভাবে দিন পার করছেন। তাদের সামনে বিরাট অনিশ্চয়তা। এমন পরিস্থিতিতে এসব কর্মীর জন্য সরকারি সহায়তা জরুরি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘এ শ্রেণির মানুষ বেশি অসহায়। তাদের কাছে ত্রাণ পৌঁছায় না। আবার মানুষের কাছে চাইতেও পারেন না। ফলে তাদের জন্য সরকারের সহায়তা জরুরি।
তিনি বলেন, কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে সবার আগে এগিয়ে আসা উচিত। কারণ তাদের কাছে সুশৃঙ্খল একটি তালিকা রয়েছে। এছাড়াও তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবীদের খাদ্য নিরাপত্তার ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব রয়েছে।’
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘করোনার কারণে সারা বিশ্ব এখন বিপর্যস্ত। বাংলাদেশও একটা কঠিন সময় পার করছে। দেশের সব খাতের পরিস্থিতিই এখন খারাপ। এ সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে। বীমাকর্মীদের জন্য সরকারের কাছে প্রণোদনা চাই।’
নিয়ম অনুসারে বীমা পলিসি বিক্রির নির্ধারিত কমিশনের বাইরে তাদের কোনো বেতন-ভাতা নেই। বীমা কোম্পানিতে বীমা প্রতিনিধি বা বীমা এজেন্ট যারা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন তাদের কোনো বেতন দেয়া হয় না, শুধু কমিশনের ওপর ভিত্তি করে তাদের জীবন চলে।
করোনা মহামারীতে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হওয়ায় সম্পূর্ণভাবে উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানির কমিশনভিত্তিক কর্মীরা।
বর্তমানে দেশে ৭৮টি বীমা কোম্পানি। এর মধ্যে সাধারণ বীমা ৪৬ এবং জীবন বীমা ৩২টি। এসব কোম্পানিতে ৮ লাখের বেশি এজেন্ট রয়েছেন, যাদের আয় বীমা পলিসির সঙ্গে সম্পৃক্ত। পলিসির টাকা না আনতে পারলে তাদের কোনো আয় নেই।
একটি ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, করোনায় দীর্ঘদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মিল-কারখানা, অফিস-আলাদত বন্ধ থাকায় বীমাকর্মীদের ব্যবসা নেই। তাই তাদের বেতন পাওয়ারও সুযোগ নেই।
এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি সংকটে কমিশনভিত্তিক কর্মীরা। বীমা খাতের স্বার্থে এ মুহূর্তে আমাদের তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তা না হলে দীর্ঘ মেয়াদে জনবল সংকটে পড়তে পারে বীমা খাত।
এ অবস্থায় বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য ২ শতাংশ সুদে ১৮ মাসের জন্য কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা প্রণোদনার অনুরোধ করেন তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বীমা ব্যবসা মূলত এজেন্টনির্ভর। সারা দেশে এজেন্ট সংখ্যা ৮ লাখের বেশি। তাদের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী ৩০-৩২ লাখ। কিন্তু করোনায় এখন সব এজেন্ট ঘরবন্দি। কোনো কাজ করতে পারছেন না।
তাই তাদের কোনো আয়-রোজগারও নেই। এ অবস্থায় বীমা খাতের স্বার্থেই তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তারা বাঁচলে বীমা খাত বাঁচবে। তা না হলে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হবেন তারা । যা হবে বীমাশিল্পের জন্য বিপজ্জনক।
শেয়ারবার্তা / মিলন