করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের অর্থনীতিতেই ধস নেমেছে। এত কিছুর পরও চলতি অর্থবছরে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় ভালো অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশের অর্থনীতি। তবে করোনা বিদায় নিলে আগামী অর্থবছরই (২০২০-২১) দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো, চীন, জাপান, রাশিয়া, ভারত, সৌদি আরব, পাকিস্তানের মতো দেশকে পেছনে ফেলে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হবে বাংলাদেশের, যা বেড়ে দাঁড়াবে সাড়ে ৯ শতাংশে।
গত ১৪ এপ্রিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক প্রতিবেদনে এমনটাই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
আইএমএফের তথ্যমতে, গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) বাংলাদেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। করোনার প্রভাবে চলতি অর্থবছর তা কমে দাঁড়াবে ২ শতাংশে। তবে তার পরের অর্থবছরই (২০২০-২১) দেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ।
আইএমএফের পূর্বাভাস বলছে, করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে পৃথিবী স্বাভাবিক হলে ২০২০-২১ অর্থবছরে (আইএমএফের হিসাবে ২০২১ সাল) যুক্তরাষ্ট্রে প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ, ইউরোপীয় অঞ্চলে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ, জাপানে ৩ শতাংশ, চীনে ৯ দশমিক ২ শতাংশ, ভারতে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, রাশিয়ায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, ব্রাজিলে ২ দশমিক ৯ শতাংশ, সৌদি আরবে ২ দশমিক ৯ শতাংশ, পাকিস্তানে ২ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৪ শতাংশ এবং বাংলাদেশে সাড়ে ৯ শতাংশ।
করোনার কারণে চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশে নামলেও যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, রাশিয়া, জাপান, ব্রাজিল, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তানের কোনো প্রবৃদ্ধি থাকবে না, বরং ঋণাত্মক হবে বলেও জানিয়েছে আইএমএফ।
তাদের পূর্বাভাস বলছে, চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরে (আইএমএফের হিসাবে ২০২০ সালে) জিডিপির প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে যুক্তরাষ্ট্রে ঋণাত্মক ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, ইউরোপীয় অঞ্চলে ঋণাত্মক ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, জাপানে ঋণাত্মক ৫ দশমিক ২ শতাংশ, চীনে ১ দশমিক ২ শতাংশ, ভারতে ১ দশমিক ৯ শতাংশ, রাশিয়ায় ঋণাত্মক ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, ব্রাজিলে ঋণাত্মক ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, সৌদি আরবে ঋণাত্মক ২ দশমিক ৩ শতাংশ, পাকিস্তানে ঋণাত্মক ১ দশমিক ৫ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকায় ঋণাত্মক ৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং বাংলাদেশে ২ শতাংশ।
আইএমএফের দুদিন আগে (১২ এপ্রিল) বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংকও। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের সঙ্গে আইএমএফের প্রতিবেদনে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে।
আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৯ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ২ থেকে ২ দশমিক ৯ শতাংশে নামতে পারে।
আরেকটি গরমিল হলো- আইএমএফ বলেছে, গত অর্থবছর (২০১৯-২০) বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলেছে, গত অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ।
বাংলাদেশের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গত (২০১৮-১৯) অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। করোনাভাইরাসের কারণে চলতি অর্থবছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি নামতে পারে ২ থেকে ৩ শতাংশে। তার পরের অর্থবছর (২০২০-২১) প্রবৃদ্ধির পরিমাণ আরও কমতে পারে। এ সময় ১ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসতে পারে। ২০২১-২২ অর্থবছরে অল্প বেড়ে জিডিপির প্রবৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ দশমিক ৮ থেকে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
শেয়ারবার্তা / মিলন