নির্ধারিত সময়ে সব শ্রমিককে বেতন না দিয়ে এখন পোশাক কারখানা লে-অফের পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরইমধ্যে ৪০ ভাগ পোশাক কারখানায় লে-অফের নোটিশ দেয়া হয়েছে বলে গার্মেন্টস শ্রমিক নেতারা অভিযোগ করেছেন।
বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক নির্ধারিত সময় ১৬ এপ্রিলের মধ্যে ৮৭ ভাগ শ্রমিককে বেতন দেয়ার দাবি করলেও শ্রমিক নেতারা এটাকে ‘মিথ্যাচার’ বলছেন। তারা বলেছেন, অন্তত দুই হাজার কারখানার শ্রমিকরা বেতন পাননি। আর শতকরা হিসেবে ৩০ ভাগ কারখানায় বেতন হয়নি। তাদের বেতন কবে দেয়া হবে তারা কোনো প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়নি। এসব পোশাক কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা। তারা আরো বলেন, অনেক কারখানায় পাঁচ দিনের বেতন কেটে রাখা হয়েছে। অথচ সরকার পাঁচ দিনের সাধারণ ছুটি দিয়েছিল।
বিজিএমইএ’র দাবি ও কারখানা লে-অফ
বিজিইএমএ দাবি করেছে, তাদের সদস্যভুক্ত দুই হাজার ২৭৪টি কারখানার মধ্যে এক হাজার ৬৬৫টি কারখানার শ্রমিকের বেতন দেয়া হয়েছে। সদস্যভুক্ত কাখানাগুলোতে ২৪ লাখ ৭২ হাজার ৪১৭ জন শ্রমিক আছেন। তাদের মধ্যে ২১ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ শ্রমিক বেতন পেয়েছেন। সেই হিসেবে ৮৭ ভাগ শ্রমিক বেতন পেয়েছেন। আর কারখানা হিসেবে ৭৩ ভাগ কারাখানা বেতন দিয়েছে।
বাস্তবে বিজিএমইএ’র সদস্য চার হাজার ৬২১টি কারখানা। রুবানা হক অবশ্য দাবি করেছেন, যেসব পোশাক কারখানা সরাসরি রপ্তানি করে, তাদেরই সদস্য বলা হচ্ছে।
কিন্তু জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন,‘বাস্তবে পোশাক কারখানা পাঁচ হাজারের বেশি। আর শ্রমিকের সংখ্যা কমপেক্ষ ৫০ লাখ। আসলে তারা যখন সুবিধা আদায় করতে চায়, তখন পোশাক কারখানা আর শ্রমিকের সংখ্যা বেশি দেখায়। আর যখন তাদের নিজেদের দিতে হয়, তখন সংখ্যাটা কমিয়ে ফেলে। যেসব কারখানা রপ্তানিকারকদের হয়ে সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করে, তাদের দায়িত্ব নেয়া হয় না।’
তিনি বলেন,‘এখন পর্যন্ত ৩০ ভাগ পোশাক কারখানায় বেতন দেয়া হয়নি। বেতন না দিয়ে অনেক মালিক গা ঢাকা দিয়েছেন। এই সব মালিকের বিরুদ্ধে সরকার ফৌজদারী মামলা করুক। কারণ, সরকারও কোনোভাবে দায় এড়াতে পারে না।’
তিনি বলেন,‘যেসব কারখানায় বেতন দেয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশই শ্রমিকদের পাঁচ দিনের বেতন কেটে রেখেছে, যা অন্যায়। আর ৪০ ভাগেরও বেশি কারখানা বেতন দিয়ে লে-অফের নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছে, যা সরকারের নির্দেশনার বিরুদ্ধে যায়।’ লে-অফের মাধ্যমে তারা শ্রমিকদের অর্ধেক বেতন দেয়ার পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
কী করবেন পোশাক শ্রমিকরা?
এদিকে পোশাক কর্মীরা বেতন না পেয়ে চরম অনিশ্চয়তার মুখে আছেন। শুক্রবার ছুটির দিনেও উত্তরা এবং গাজীপুর এলাকায় শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকার এমএসসি গার্মেন্টস-এর কর্মীরা বেতন পাননি। তারা বেতনের দাবিতে শুক্রবারও কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন। ওই কারখানার অপারেটর রূপা আক্তার বলেন,‘দুই সন্তান ও স্বামী নিয়ে আমার সংসার। মেয়েটি নবম শ্রেণি ও ছেলেটি মাদরাসায় পড়ে। মাদ্রাসা থেকে কিছু ত্রাণের চাল পেয়েছি, তা দিয়ে কয়েকদিন চলেছে। সামনে যে কীভাবে চলবে জানি না। আমার মতো এই কারখানার সাড়ে আটশ’ শ্রমিকের সবার একই অবস্থা। মালিক বলেছেন, ২২ তারিখ বেতন দেবেন। না দিলে না খেয়ে মরতে হবে। বাসা থেকে নামিয়ে দেবে বাড়ি মালিক।’
বেতন দিয়ে আবার ছাঁটাইও করা হয়েছে অনেক কারখানায়। আবার কোনো কোনো কারখানায় অর্ধেক বেতন দেয়া হয়েছে। গাজীপুরের ড্যানিশ নিট ওয়্যারের শ্রমিক আব্দুল হাকিম জানান, তাদের বেশ বিছু শ্রমিককে বেতন দিয়ে ছাঁটাই করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এখন আমরা চোখে অন্ধকার দেখছি।’
জানা গেছে, এরমধ্যে মালিকরা আবার ২৬ এপ্রিল থেকে কারখানা খোলার চিন্তা করছেন। রুবানা হক অবশ্য দাবি করেছেন,‘স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কোনো কারখানা খোলা হবে না।’
এবার ২২ তারিখ!
রুবানা হক বলেন, ‘যেসব পোশাক কারখানা বেতন দিতে পারেনি তারা ছোট ও মাঝারি। তারা সরাসরি রপ্তানি করে না। এই পরিস্থিতিতে তাদের নগদ টাকার সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা ব্যাংককে বলছি। আশা করছি, তাদের কেউ কেউ লোন পেয়ে যাবেন। আমরা আশা করছি, আগামী ২০ থেকে ২২ তারিখের মধ্যে বাকি শ্রমিকরা বেতন পেয়ে যাবেন।’
এর জবাবে বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ‘মালিকরা শ্রমিকদের সাথে প্রতারণা করেছে। তারপরও বিজিএমইএ যখন ২২ তারিখ পর্যন্ত সময় দিয়েছে, আমরা সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এরপর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।’
তবে তিনি বলেন,‘যেসব কারখানায় বেতন দেয়া হয়েছে সেখানেও একটা বড় ফাঁকি আছে। কারণ, অনেক শ্রমিক তাদের গ্রামের বাড়িতে আছেন। তারা বেতন না পেলেও হিসেবে ধরা হচ্ছে।’ সূত্র : ডয়চে ভেলে