গ্রামীণ জনপদে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে ‘দুর্যোগে আলোর গেরিলা’ শিরোনামে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড প্রত্যেক সমিতিতে বিশেষ বাহিনী গঠন করছে। ইতোমধ্যে বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিন সকল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে আলোর গেরিলা গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী শনিবারের (১৮ এপ্রিল) মধ্যে আলোর গেরিলা গঠন করে তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) বলছে, আগামী দিনে দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ঠিক রাখতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেখা যায় দেশে এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে বিদ্যুৎ বিতরণে নানা সংকট সৃষ্টি হয়। এই সময়ের মধ্যে গ্রীষ্মের তাপমাত্রা বেশি থাকে। আবার ঝড় বৃষ্টির মৌসুম চলাতে গ্রামীণ জনপদ দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে। এছাড়া আগামী ২৪ বা ২৫ এপ্রিল থেকে রোজা শুরু হচ্ছে। রমজানে সেহরি, ইফতার এবং তারাবিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করাটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
চেয়ারম্যান সমিতিগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ, গ্রীষ্মের তাপদাহ, মাহে রমজান এবং ঝড়-বৃষ্টির সময়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দ্রুত নিরসনের জন্য ‘‘সকল ত্যাগে পল্লী বিদ্যুৎ রাখিবো সচল’মূলমন্ত্র ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে উদ্ভাবনী উদ্যোগে ‘দুর্যোগে আলোর গেরিলা’ গঠন করে পরিচালনা করতে হবে।
এতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে আবির্ভূত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাংলাদেশেও বিস্তৃত হচ্ছে। এ বিস্তৃতি প্রতিরোধের জন্য সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি এবং চলাচল ও গমনাগমনে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে। এছাড়া, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে এবং বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা লক-ডাউন ঘোষিত হয়েছে। এতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীসহ সব শিক্ষার্থী এবং দেশের অধিকাংশ মানুষ ঘরেই অবস্থান করছেন। পাশাপাশি, দেশের বিভিন্ন স্থানে হাসপাতাল/চিকিৎসাকেন্দ্র, আইসোলেশন/কোয়ারেন্টিন সেন্টার ইত্যাদি প্রস্তুত আছে বা হচ্ছে। এছাড়া, সেচ মৌসুমও চলমান রয়েছে। উপরোন্ত, গ্রীষ্ম মৌসুম শুরু হওয়ায় তাপমাত্রা দিনে দিনে বাড়ার পাশাপাশি ডেঙ্গু এবং চিকনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব সৃষ্টিরও আশঙ্কা রয়েছে। গ্রীষ্ম মৌসুমের স্বাভাবিক ঝড়-বৃষ্টি ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সৃষ্টি হচ্ছে।
অন্যদিকে, আগামী ২৪ বা ২৫ এপ্রিল থেকে পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গের চিকিৎসা সেবা প্রদান, আইসোলেশন/কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিবর্গের অবস্থান আরামদায়ক করা, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য সেচ কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনা করা, শিক্ষার্থীদের লেখাপাড়া এবং গ্রীষ্মের দিনে রোজাদারদের সিয়াম সাধনা আরামদায়ক করাসহ আরইবি-এর ২ কোটি ৮৫ লাখ গ্রাহক অর্থাৎ দেশের ১২ কোটির অধিক মানুষের ঘরে অবস্থান স্বস্তিদায়ক করার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হবে।
চেয়ারম্যান বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির ক্রমশঃ অবনতির প্রেক্ষিতে বিভিন্ন এলাকা লক-ডাউনের আওতায় থাকায় এসব কার্যক্রম পরিচালনা করা দুরুহ হয়ে পড়ছে। লক-ডাউনের আওতাভুক্ত এলাকা আরও ঘনীভূত হতে পারে। এর বাইরে মৌসুমি ঝড়-বৃষ্টি বা কালবৈশাখী ঝড়ে কোনও অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হলে বর্তমান পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রুত স্বাভাবিক বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা সম্ভব নাও হতে পারে। চলমান পরিস্থিতি এবং বৈরী আবহাওয়ার মৌসুম বিবেচনা করে স্থানীয় সমস্যা সমাধানের জন্য উদ্ভাবনী উদ্যোগ ‘দুর্যোগে আলোর গেরিলা’ গঠণ এবং কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
সমিতির নিজস্ব জনবল ছাড়াও সমিতির ভৌগোলিক এলাকায় ব্যক্তিগত/ প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে অভিজ্ঞ জনসম্পদ রয়েছে। এ জনসম্পদ কাজে লাগিয়ে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের কথা ভাবতে হবে। এসব ক্ষেত্রে সমিতির লাইনম্যান, মিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার/ফোরম্যান/লাইনম্যান, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের পূর্বযোগ্যতা/সাময়িক পূর্বযোগ্যতাপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার/ফোরম্যান/লাইনম্যান, রেগুলার ভিলেজ ইলেকট্রিশিয়ান, প্রতিটি সমিতিতে ৩ ব্যাচে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভিলেজ ইলেকট্রিশিয়ান ও স্থানীয় সৎ, কর্মঠ ও দক্ষ কারিগর/শ্রমিক। এ সকল জনবলের সমন্বয়ে ‘দুর্যোগে আলোর গেরিলা’ইউনিট গঠিত হবে।
সমিতির সদর দপ্তর, জোনাল অফিস, সাব-জোনাল অফিস, এরিয়া অফিস, অভিযোগ কেন্দ্র-প্রতিটির জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক গেরিলা ইউনিট থাকবে; যার ১টি বা একাধিক সর্বদা কর্তব্যরত থাকবে এবং অপরগুলো নির্দেশনার ১৫ মিনিটের মধ্যে কাজে যোগদানের জন্য প্রস্তুত থাকবে। বলা হচ্ছে প্রতিটি গেরিলা ইউনিটে ঐ এলাকার শ্রমিক/কর্মী নিয়োজিত করলে অন্য অঞ্চলে/এলাকায় যাতায়াতের প্রয়োজন হবে না। এতে সামাজিক/শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত হবে এবং আনাগোনা হ্রাস পাবে।
দুর্যোগে আলোর গেরিলা পরিচালনার জন্য ১২ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে জেনারেল ম্যানেজারদের নির্দেশনা মেনে কাজ করতে হবে। আর দিনের পাশাপাশি রাতেও আলোর গেরিলারা যাতে কাজ করতে পারে সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে। আলোর গেরিলাদের সেহরি এবং ইফতারের ব্যবস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড করবে।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, আমরা এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ বিতরণ স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগের অংশ হিসেবে আলোর গেরিলা গঠন করছি। এখন মানুষ বেশিরভাগ সময়ে ঘরে থাকছে। ফলে বিদ্যুতের কারণে তাদের যাতে কোনও সমস্যা সৃষ্টি না হয় – এ জন্যই এ উদ্যোগ।
শেয়ারবার্তা / মিলন