দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার হোল্ডারদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)।
পুঁজিনিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ‘ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট বিধিমালা ২০২০’ খসড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়েছে।
ডিএসইর চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), সকল শেয়ারহোল্ডার ও স্বাধীন পরিচালক এবং কোম্পানি সচিব বরাবর রোববার এই নোটিশ পাঠানো হয়।
নোটিশ পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে বিএসইসির খসড়ার বিষয়ে আপত্তি জানাতে বলা হয়েছে। তা না করলে ডিএসইর সকল পরিচালককে অপসারণের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে নোটিশে হুমকি দেয়া হয়।
আইনজীবী আহসানুল করিমের মাধ্যমে পাঠানো এই আইনি নোটিশে বলা হয়েছে, ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট বিধিমালার বিষয়ে বিএসইসি যে খসড়া করেছে, তা আইনসংগত হয়নি। এ ধরনের বিধিমালা করার আইনগত কোনো অধিকার নেই বিএসইসির।
এতে বলা হয়েছে, বিএসইসি তথাকথিত খসড়া ‘ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট’ বিধিমালা জারির জন্য মন্তব্য চেয়ে ৪ মার্চ চিঠি দেয়। যা ডিএসই ৮ মার্চ পায়। কিন্তু ডিএসই খসড়া বিধিমালা সর্ম্পক্যে অনাপত্তি বা সম্মতি জানিয়েছে। বিএসইসির উল্লিখিত খসড়া-বিধি বাস্তবায়নে পুরো পুঁজিবাজারে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে জেনেও ডিএসইর এই সম্মতি খুবই আশ্চর্যজনক।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, ট্রেকের খসড়া বিধিমালার দফা ৩, ৪, ৫, ৬ এবং ৮ বিধিসম্মত না হওয়া সত্ত্বেও ডিএসই সম্মতি জানিয়েছে। এছাড়া বিএসইসির এ জাতীয় কোনও কাঠামো গঠনের কোন অধিকার নেই। একইসাথে বিএসইসির বর্ণিত খসড়া-বিধিগুলির বিষয়বস্তু ও নতুন ট্রেক আবেদনকারীর জন্য ফি নির্ধারণ করা কেবল বিপর্যয়ের কাজ। এছাড়া বিএসইসির এ জাতীয় বিধি বিধানের মাধ্যমে ট্রেকহোল্ডার নির্বাচনের যোগ্যতা নির্ধারণের কোন অধিকার নেই।
এ কারণে ৭ দিনের মধ্যে ডিএসই থেকে বিএসইসির খসড়া বিধিমালার ওপর ইমেইল অথবা অন্য কোনো উপায়ে ‘আপত্তি নোট’ দিতে বলা হয়েছে লিগ্যাল নোটিশে।
আপত্তি নোট দিতে ব্যর্থ হলে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের নিয়ে অতিরিক্ত সাধারণ সভা (ইজিএম) করে ডিএসইর সকল পরিচালককে অপসারণ করার পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আইনি নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, আইন অনুযায়ী ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট বিধিমালা বিএসইসি করে দিতে পারে না। এই নীতিমালা ডিএসই করে তা বিএসইসির অনুমোদন নেবে- এটাই নিয়ম।
তিনি বলেন, একদিকে বিধিমালা করার ক্ষেত্রে আইন মানা হয়নি, অন্যদিকে এমনভাবে খসড়া করা হয়েছে যাতে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ চরমভাবে ক্ষুণ্ন হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ ‘ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট বিধিমালা ২০২০’ খসড়া করে তা জনমত যাচাইয়ের জন্য মতামত চা্য় বিএসইসি। এ খসড়া চূড়ান্ত করতে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে মতামত চাওয়া হয়। মতামতে খসড়ার কোনো বিষয়ে আপত্তি বা পরামর্শ থাকলে তা জানাতে বলা হয়েছে।
বিএসইসির খসড়ায় বলা হয়েছে, এক্সচেঞ্জের প্রত্যেক প্রাথমিক শেয়ারহোল্ডার ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইনের আওতায় একটি করে ট্রেক (ব্রোকারেজ হাউজ) পাওয়ার অধিকার রাখেন।
প্রাথমিক শেয়ারহোল্ডারদের বাইরে ট্রেক পাওয়ার যোগ্যতার শর্তে রাখা হয়েছে- কোম্পানি, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা কমিশন থেকে অনুমোদন যেসব প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূল্যধন ৩ কোটি টাকা বা তার বেশি রয়েছে তারা ট্রেক পাওয়ার যোগ্য হবেন। তবে নিট সম্পদের পরিমাণ সব সময় পরিশোধিত মূলধনের ৭৫ শতাংশের বেশি থাকতে হবে।
ট্রেক পাওয়ার জন্য ১ লাখ টাকা ফি দিয়ে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। এই ফি ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে এক্সচেঞ্জ বরাবর জমা দিতে হবে। আবেদন পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করে এক্সচেঞ্জ ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা মঞ্জুর করবে অথবা বাতিল করবে। আবেদন মঞ্জুর হলে নিবন্ধন ফি বাবদ ৫ লাখ টাকা এক্সচেঞ্জ বরাবর ব্যাংকড্রাফট বা পে-অর্ডার করতে হবে। অর্থাৎ মাত্র ৬ লাখ টাকা দিয়েই হওয়া যাবে ব্রোকারেজ হাউজের মালিক।
কোনো প্রতিষ্ঠান ট্রেক পেলে তা হস্তান্তর করা যাবে না। আবার নিবন্ধন পাওয়ার এক বছরের মধ্যে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা ২০০০ অনুযায়ী স্টক-ডিলার বা স্টক-ব্রোকারের সনদ নিতে হবে। এই সনদ নেয়ার ৬ মাসের মধ্যে ব্যবসা শুরু করতে না পারলে ট্রেক বাতিল হয়ে যাবে।
ডিএসইর এক সদস্য বলেন, ৩২ কোটি টাকায় মেম্বারশিপ বিক্রি করেও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা যাচ্ছে না। সেখানে একজন মাত্র ৬ লাখ টাকা দিয়ে ট্রেকহোল্ডার (ব্রোকারেজ হাউজের মালিক) হয়ে কীভাবে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ সংক্রান্ত নীতিমালা হাস্যকার। এটি দেখে অবাক হয়েছি। বিএসইসি কীভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
শেয়ারবার্তা / আনিস