অর্থবছর শেষ হলেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে এবার নির্দিষ্ট সময়ে শেয়ারবাহারে তালিকাভুক্ত ডিসেম্বর ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ সংক্রান্ত বোর্ড সভা আয়োজন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যাংক, বীমা ও লিজিং খাতের কোম্পানিগুলোর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই তিন খাতের মধ্যে ব্যাংক খাতে ৩০টি, বীমা খাতে ৪৭টি এবং লিজিং খাতে ২৩টি কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে একটি বাদে সবগুলোরই ২০১৯ সালের অর্থবছর শেষ হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর। নিয়ম অনুযায়ী সমাপ্ত বছর শেষ হওয়ার পরবর্তী চার মাস বা ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে বোর্ড সভা করতে হয় কোম্পানিগুলোকে। সে অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বর অর্থবছর শেষ হওয়া কোম্পানিগুলোকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বোর্ড সভা করতে হবে।
কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এ সময় পর্যন্ত দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে পুঁজিবাজারও। যার কারণে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বোর্ড সভা করতে পারছে না কোম্পানিগুলো। কারণ বোর্ড সভা করার আগে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে জানাতে হয়। আর দুই স্টক এক্সচেঞ্জ তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সেই তথ্য শেয়ারহোল্ডারদের জানিয়ে দেয়। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত থাকায় কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেক স্টক এক্সচেঞ্জকে এবং স্টক এক্সচেঞ্জ বোর্ড সভা করার তথ্য শেয়ারহোল্ডারদের সেই তথ্য জানাতে পারছে না। কাজেই ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত এসব কোম্পানি বোর্ড সভা করতে পারছে না।
অপরদিকে সাধারণ ছুটি আর না বাড়লে চলতি মাসে পাঁচ কার্যদিবস পাবে কোম্পানিগুলো। তবে এ সময়ের মধ্যে সব কোম্পানি বোর্ড সভা করবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিনিয়োগকারীরা।
কয়েকজন বিনিয়োগকারী বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও করোনা আঘাত শুরু হয়েছে। সরকার কয়েক দফায় সাধারণ ছুটি বাড়িয়ে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত করেছে। সামনের দিনগুলোতে করোনা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে সরকার ছুটি আরো বাড়াবে কি না। তবে করোনার রোগী যদি আরো বাড়ে তবে সরকার ছুটির মেয়াদ আরো বাড়াতে পারে। সে ক্ষেত্রে শেয়ারবাজারের ছুটিও আরো বাড়তে পারে। আর ছুটি বাড়লে কোম্পানিগুলোর পক্ষে বোর্ড সভা যথা সময়ে করা সম্ভব নাও হতে পারে। আর ছুটি না বাড়লেও মাসের শেষ পাঁচ কার্যদিবসে সব বোম্পানিগুলো বোর্ড সভা করবে কি না তাও নিশ্চিত নয়। এসব কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কোম্পানিগুলোর বোর্ড সভা নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
সমাপ্ত অর্থবছর শেষে ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ৬টি, বীমা খাতের ৪৭টির মধ্যে ৫টি এবং লিজিং খাতে ২৩টির মধ্যে ৪টি ইতি মধ্যে বোর্ড সভা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
ব্যাংকিং খাতের ছয়টির মধ্যে ব্যাংক এশিয়া ১০ শতাংশ নগদ, ইস্টার্ন ব্যাংক ২৫ শতাংশ নগদ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ১১ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ৩০ শতাংশ নগদ, উত্তরা ব্যাংক ১০ শতাংশ নগদ ও ২৫ শতাংশ বোনাস এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আর ২৪টি ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশের আশায় রয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো: এবি, আল আরাফাহ ইসলামী, সিটি, ঢাকা এক্সিম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, আইসিবি ইসলামিক, আইএফআইসি, ইসলামী, যমুনা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ন্যাশনাল, এনসিসি, ওয়ান, প্রিমিয়ার, প্রাইম, পূবালী, রূপালী, শাহজালাল ইসলামী, স্যোসাল ইসলামী, সাউথইস্ট, ট্রাস্ট এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক।
এছাড়া বীমা খাতের ৪৭টির মধ্যে বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ১১ শতাংশ নগদ, গ্রীণডেল্টা ইন্স্যুরেন্স ১৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস, নিটল ইন্স্যুরেন্স ১৫ শতাংশ নগদ, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স ২ শতাংশ নগদ এবং ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এ খাতের বাকি ৪২টি কোম্পানি এখনো লভ্যাংশ সংক্রান্ত বোর্ড সভা করেনি।
লিজিং খাতের ২৩টির মধ্যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ৪টি। এর মধ্যে ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ২০ শতাংশ নগদ ও ১৫ শতাংশ বোনাস, আইডিএলসি ৩৫ শতাংশ নগদ, আইপিডিসি ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস এবং ইউনাইটেড ফাইন্যান্স ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এ খাতে আইসিবি বাদে বাকি ১৮টি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছর শেষ হয়েছে। এই ১৮ কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা লভ্যাংশ সংক্রান্ত বোর্ড সভার অপেক্ষায় রয়েছে।
শেয়ারবার্তা/সাইফুল