করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত গ্রামীণফোনের শেয়ারের বিনিয়োগকারীরা ২২ কার্যদিবসে সম্মিলিতভাবে হারিয়েছেন প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম কমার ফলে বিনিয়োগকারীরা এই ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
গত বছরের ডিসেম্বরের চীনে প্রথম করোনাভাইরাস আঘাত হানে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাস ইতোমধ্যে সাড়ে ৬৯ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ লাখ।
বাংলাদেশ প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রম শনাক্ত হয় মার্চের ৮ তারিখে। তবে এর আগেই বিশ্ব পুঁজিবাজারের পাশাপাশি বাংলাদে্শের পুঁজিবাজারেও নেতিবাচক প্রবণতা শুরু হয়ে যায়। কমতে থাকে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের দাম। আর ৮ মার্চের পর দফায় দফায় পুঁজিবাজারে ধসের ঘটনা ঘটে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গ্রামীণফোনের শেয়ার দাম কমা শুরু হয় ফেব্রুয়ারির ২৩ তারিখের পর থেকে। ২৩ ফেব্রুয়ারি টেলিযোগাযোগ খাতের এই কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩১৯.৬০ টাকা। যা টানা কমে পুঁজিবাজারের লেনদেন বন্ধ হওয়ার আগে ২৫ মার্চ দাঁড়ায় ২৩৮.৮০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের দাম কমে ৮০.৮০ টাকা। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে ১০ হাজার ৯১০ কোটি ৪২ লাখ ৪১ হাজার টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক সদস্য বলেন, ‘গ্রামীণফোন পুঁজিবাজারের সব থেকে বড় মূলধনের কোম্পানি। সূচকের ওপর এই কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমা অথবা বাড়ার বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে মার্চজুড়েই পুঁজিবাজারে একের পর এক বড় দরপতন হয়েছে। গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম বড় অঙ্কে কমে যাওয়া এই দরপতন তরান্বিত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বকেয়া নিয়ে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্বের মধ্যে করোনাভাইরাস আতঙ্ক গ্রামীণফোনের শেয়ারের দরপতন তরান্বিত করেছে। তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখবেন, আদালতের নির্দেশ মেনে ২৩ মার্চ গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ বিটিআরসিকে এক হাজার কোটি টাকা দেয়। এরপর থেকেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমা শুরু হয়। আর ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সেই পতনের মাত্রা আরও বেড়েছে।’
১ হাজার ৩৫০ কোটি ৩০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের মোট শেয়ার সংখ্যা ১৩৫ কোটি ৩ লাখ ২২টি। কোম্পানিটির এই শেয়ারের ৯০ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। এ হিসাবে দরপতনের কবলে পড়ে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা হারিয়েছেন ৯ হাজার ৮১৯ কোটি ৩৮ লাখ ১৭ হাজার টাকা।
প্রতিষ্ঠানটির বাকি শেয়ারের মধ্যে ২.১৪ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩.৯৯ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে ৩.৮৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
এ হিসাবে গ্রামীণফোনের শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিদেশিরা হারিয়েছেন ৪২২ কোটি ২৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছেন ৪৩৫ কোটি ৩২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছেন ২৩৩ কোটি ৪৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
শেয়ারবার্তা/সাইফুল