বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সম্প্রতি ট্রেক বিধিমালা-২০২০-এর খসড়া প্রকাশ করেছে। খসড়ায় মিউচুয়াল ফান্ডসহ কোনো যৌথ বিনিয়োগ স্কিম ট্রেক লাইসেন্স পাবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্রোকার বা ডিলার হিসেবে লেনদেনের অধিকার অর্জনের জন্য স্টক এক্সচেঞ্জের কাছ থেকে ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট (ট্রেক) নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ সার্টিফিকেট ছাড়া কেউ ব্রোকার বা ডিলার হিসেবে ব্যবসা করতে পারবে না।
বর্তমানে ২০১৩ সালের ট্রেক বিধিমালার মাধ্যমে ট্রেক লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। নতুন বিধিমালাটি চূড়ান্ত হয়ে গেলে ২০১৩ সালের বিধিমালাটি বাতিল হয়ে যাবে। ট্রেক বিধিমালা-২০২০-এর খসড়াটি ২০১৩ সালের এক্সচেঞ্জেস ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনের ধারা ২২-এর উপধারা (৩)-এর বিধান অনুসারে প্রণয়ন করেছে বিএসইসি। ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনের আওতায় প্রণীত হওয়ার কারণে খসড়া বিধিমালাটিও বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশ করতে হবে। পরবর্তী সময়ে স্টেকহোল্ডারদের মতামতের ভিত্তিতে বিধিমালায় প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন শেষে চূড়ান্ত হওয়ার আবারো গেজেটে প্রকাশ করা হবে।
ট্রেক বিধিমালা-২০২০-এর খসড়ায় ট্রেক পাওয়ার যোগ্যতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাথমিক শেয়ারহোল্ডাররা ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনের আওতায় এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিমের শর্তানুযায়ী একটি করে ট্রেক পাবেন। তাছাড়া এক্সচেঞ্জের শেয়ারহোল্ডারের বাইরে ন্যূনতম ৩ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন রয়েছে এমন কোনো কোম্পানি, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত কোনো প্রতিষ্ঠান ট্রেক লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। ট্রেক লাইসেন্সধারীকে তার পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ অর্থ সবসময়ের জন্য নিরীক্ষিত নিট সম্পদ হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে। পরিশোধিত মূলধনের অতিরিক্ত হিসেবে আরো ২ কোটি টাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে জামানত হিসেবে জমা দিতে হবে। তাছাড়া পরিচালকদের মধ্যে কেউ যদি ফৌজদারি মামলায় শাস্তিপ্রাপ্ত হয় কিংবা সর্বশেষ সিআইবি প্রতিবেদনে ঋণখেলাপি হলে সেই প্রতিষ্ঠান ট্রেকহোল্ডার লাইসেন্স পাবে না। তাছাড়া ট্রেক লাইসেন্স পেতে হলে সেই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের মধ্যে এর উদ্যোক্তা কোম্পানির সদস্য সংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি থাকতে পারবে না। এছাড়া এক ট্রেকের পরিচালক যদি অন্য কোনো ট্রেকের পরিচালক হিসেবে থাকেন, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান ট্রেক লাইসেন্স পাবে না। ট্রেক লাইসেন্স হস্তান্তর করা যাবে না।
খসড়া বিধিমালায় বিভিন্ন ফির বিষয়ে বলা হয়েছে, আবেদন করার সময় ১ লাখ টাকা ফি দিতে হবে এবং ট্রেক সনদ নেয়ার আগে ৫ লাখ টাকা নিবন্ধন ফি দিতে হবে। অর্থবছর শেষ হওয়ার ৩০ দিন আগে বার্ষিক ফি বাবদ ১ লাখ টাকা এক্সচেঞ্জের কাছে জমা দিতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফি জমা দিতে ব্যর্থ হলে প্রতিদিনের জন্য ৫০০ টাকা অতিরিক্ত ফি জমা দিতে হবে।
ট্রেক বাতিলের বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, ট্রেক সনদ নেয়ার এক বছরের মধ্যে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক-ডিলার, স্টক-ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা ২০০০ অনুসারে স্টক ডিলার বা স্টক ব্রোকার সনদ নিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। আর নিবন্ধনের ছয় মাসের মধ্যে ব্যবসা শুরু করতে ব্যর্থ হলে ট্রেক লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। তাছাড়া এ বিধিমালার কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে স্টক এক্সচেঞ্জ ট্রেক লাইসেন্স বাতিল করতে পারবে।
কোনো ব্যক্তি একসঙ্গে একটি স্টক এক্সচেঞ্জে একটির বেশি ট্রেক লাইসেন্স নিতে পারবেন না। তাছাড়া কোনো ব্যক্তি একই সময়ে একাধিক ট্রেক সনদধারী কোম্পানির তদারকি পদে থাকতে পারবেন না। তবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) যৌথ ট্রেক সনদধারীদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না।
সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে এ খসড়া বিধিমালার বিষয়ে তাদের মতামত কিংবা পরামর্শ বিএসইসির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে। নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে ২৫ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব জরুরি সেবা ব্যতীত সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। বন্ধ রয়েছে পুঁজিবাজারও। করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে বন্ধ ঘোষণার মেয়াদ আরো বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্টেকহোল্ডারদের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলে খসড়া বিধিমালার ওপর মতামত দেয়ার সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়টি কমিশন বিবেচনা করবে।
শেয়ারবার্তা / হামিদ