করোনাভাইরাস বিশ্বঅর্থনীতিকে সংকটের মধ্যে ফেলায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশও এর ব্যাতিক্রম নয়। এখন অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের পক্ষ থেকে বড় আকারের রাজস্বনীতি ঘোষণা করতে হবে। এখন পর্যন্ত এ ধরনের প্রস্তাবনা সরকারের তরফ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরা হয়নি। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে দেরি না করে এখনই শুরু করা উচিত। কারণ, আগে দেশ রক্ষা; তারপর অন্য কিছু। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
মাহমুদ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক মিজানুর রহমান ও অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর।
অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাস বিশ্বঅর্থনীতিকে সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিতেই ব্যাপক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে উন্নত দেশগুলোয় অর্থনীতির সামগ্রিক সরবরাহ ও চাহিদা সংকোচনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আর এ সংকটের পরিমাণ এখন নির্ণয় করা বেশ কঠিন। বাংলাদেশের অর্থনীতিও বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। বাংলাদেশ ও ভারত জাতীয়ভাবে সবকিছু লকডাউন করে দিয়েছে। দেশের অর্থনীতির চাকা বন্ধ হয়ে গেছে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও প্রগতির চালিকাশক্তি রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে। চলতি মাসে বস্ত্র খাতে দুই দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল হয়েছে। এ খাতে লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। অনেকের চাকরি হারানোর শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। তাই এ সময়ে সরকারকে তারল্য ও ব্যয় বাড়াতে হবে। ঠিক একইভাবে মনিটরিং পলিসিতে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
আহসান এইচ মনুসর বলেন, করোনা সংক্রমণে চীনে প্রথম প্রান্তিকের শিল্পোৎপাদন ৪০ শতাংশের মতো কমে গেছে-যা তাদের অর্থনীতির জন্য বড় ক্ষতি। আমাদেরও এমন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এ সময় আমাদের ইতিবাচক গ্রোথ আশা করা সমীচীন হবে না। দুইটি খাত ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হবে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্য, বিশেষ করে আরএমজি, চামড়াশিল্প প্রভৃতি পণ্য রফতানি হবে না। এসব পণ্যের সরবরাহ বাতিল হবে। রফতানি ছাড়া আরও বড় ক্ষতি হবে হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট খাতে। সব ধরনের বিনোদন ও রিসোর্ট কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। এখানে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ কাজ করে। তারা এখন বেকার। দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, রিকশা ও ভ্যানচালকদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন এদের অবস্থা কী হবে বিষয়টি নিয়ে সরকারের এখনই ভাবতে হবে। প্রত্যক্ষভাবে প্রায় এক কোটির বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। পরোক্ষভাবে যা আরও বেশি।
এ রকম পরিস্থিতিতে বিশ্বের সরকারপ্রধানরা দুটি পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত তারল্য সরবরাহ করা হয় অর্থনীতিতে। যাতে করে প্রতিষ্ঠানকর্মীদের অন্তত ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বেতন দিতে পারে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, যেসব প্রতিষ্ঠানের ঋণ দিতে দেরি হবে, তাদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া। তবে এ বিষয়টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক করেছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সাধুবাদ জানাই। তৃতীয় বিষয়টির জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। সরকারের পক্ষ থেকে বড় আকারের রাজস্বনীতি ঘোষণা করতে হবে। এখন পর্যন্ত এ ধরনের প্রস্তাবনা সরকার থেকে সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরা হয়নি। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে দেরি না করে এখনই শুরু করা উচিত। কারণ, আগে দেশ রক্ষা, তারপর অন্য কিছু।
শেয়ারবার্তা / হামিদ