শুনতে অবাক লাগলেও পানির দামেই পাওয়া যাচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কিছু ব্যাংকের শেয়ার। করোনাভাইরাসের আতঙ্কে এখন অনেক ব্যাংকের শেয়ার দর তলানিতে। এরমধ্যে আবার শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস (যে দরের নিচে নামবে না) নির্ধারন করে দেওয়ায় বিনিয়োগের আরও সুযোগ তৈরী হয়েছে।
বর্তমানে পুঁজিবাজারে এবি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক, আইসিবি ইসলামীক ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের শেয়ার অভিহিত মূল্যের নিচে অবস্থান করছে। এরমধ্যে ২০১৮ সালের ব্যবসায় নামমাত্র মুনাফা করা এবি ব্যাংক ও লোকসানি আইসিবি ইসলামীক ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের কোন লভ্যাংশ দেয়নি। অন্য ব্যাংকগুলো ১০ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়েছিল।
গত বছর এক্সিম ব্যাংকের পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক ১০ শতাংশ বোনাস, আইএফআইসি ব্যাংক ১০ শতাংশ বোনাস, ন্যাশনাল ব্যাংক ১০ শতাংশ বোনাস, ওয়ান ব্যাংক ১০ শতাংশ বোনাস ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছিল।
এদিকে ২০১৯ সালের ব্যবসায় কিছু ব্যাংকের পর্ষদ এরইমধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এবার ব্যাংকগুলো নগদ লভ্যাংশে ঝুঁকেছে। এ তালিকায় স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে। এছাড়া ডাচ-বাংলা ব্যাংক ৩০ শতাংশ নগদ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ১১ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস এবং ব্যাংক এশিয়া ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
এই পরিস্থিতিতে অভিহিত মূল্যের নিচের ব্যাংকগুলোর শেয়ারে বিনিয়োগে লভ্যাংশ আনুপাতিক হারে বেশি পাওয়া যাবে। ওই ব্যাংকগুলো যদি ১০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দেয়, সেই হার বিনিয়োগের তুলনায় আরও বেশি হবে। কারন লভ্যাংশ অভিহিত মূল্য বা ১০ টাকার উপরে দেওয়া হলেও বিনিয়োগ ১০ টাকার কমে করা যাচ্ছে।
২০১৯ সালের ব্যবসায় ১টি বাদে ২৯টি ব্যাংক থেকে লভ্যাংশ প্রায় নিশ্চিত। আর ব্যাংকগুলো লভ্যাংশ ঘোষণা করবে এপ্রিল মাসের মধ্যে। ফলে এখন ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগে মুনাফা নিশ্চিত। কারন ওই ব্যাংকগুলোর শেয়ার দর এখন ফ্লোর প্রাইসে অবস্থান করছে। যেখান থেকে নামার সুযোগ নেই। যাতে লভ্যাংশ আয় হবে নিশ্চিত। এছাড়া ভালো লভ্যাংশ ঘোষণা করা ব্যাংক থেকে ক্যাপিটাল গেইনের সুযোগ থাকবে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে মুনাফার তুলনায় বর্তমানে সবচেয়ে কম দরে অবস্থান করছে সাউথইস্ট ব্যাংকের শেয়ার। যে শেয়ারটিতে বিনিয়োগ মাত্র ৩ বছরেই ফেরত পাওয়া যাবে। এছাড়া ৬টি ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ ৪-৫ বছরের মধ্যে ফেরত পাওয়া যাবে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২৯ মার্চ সাউথইস্ট ব্যাংকের শেয়ার দর দাড়িঁয়েছে ১১ টাকা ৩০ পয়সা। আর ব্যাংকটির ২০১৯ সালের ৩টি প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ১৯) শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ৮২ পয়সা। এ হিসাবে বছরে ইপিএস হবে ৩ টাকা ৭৬ পয়সা। যাতে ১১ টাকা ৩০ পয়সার বিনিয়োগ ফেরতে লাগবে ৩.০১ বছর। যা শতাংশ হিসাবে ৩৩.২২।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ার বিনিয়োগযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। পিই হিসাবে শেয়ারগুলো নিরাপদ অবস্থায় আছে।
নিম্নে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর নাম ও বিনিয়োগ ফেরতের সময় তুলে ধরা হল-
ব্যাংকের নাম | বিনিয়োগ ফেরতে লাগবে |
সাউথইস্ট ব্যাংক | ৩.০১ বছর |
মার্কেন্টাইল ব্যাংক | ৪.২২ বছর |
এনসিসি ব্যাংক | ৪.৩৫ বছর |
যমুনা ব্যাংক | ৪.৪৩ বছর |
প্রিমিয়ার ব্যাংক | ৪.৬১ বছর |
আইএফআইসি ব্যাংক | ৪.৭১ বছর |
দি সিটি ব্যাংক | ৪.৯৭ বছর |
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক | ৫.০৮ বছর |
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক | ৫.৩৭ বছর |
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক | ৫.৬১ বছর |
পূবালি ব্যাংক | ৫.৭১ বছর |
ইসলামী ব্যাংক | ৫.৭৯ বছর |
উত্তরা ব্যাংক | ৬.৩০ বছর |
ঢাকা ব্যাংক | ৬.৪১ বছর |
ডাচ-বাংলা ব্যাংক | ৬.৭৭ বছর |
ট্রাস্ট ব্যাংক | ৬.৭৮ বছর |
প্রাইম ব্যাংক | ৮.১৭ বছর |
ইস্টার্ন ব্যাংক | ৮.২৪ বছর |
ন্যাশনাল ব্যাংক | ৮.৩১ বছর |
ব্র্যাক ব্যাংক | ৮.৬৭ বছর |
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক | ৯.৭৫ বছর |
ব্যাংক এশিয়া | ৯.৮২ বছর |
ওয়ান ব্যাংক | ১০.৩৭ বছর |
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক | ১০.৫৬ বছর |
স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক | ১২.২৬ বছর |
এক্সিম ব্যাংক | ১৬.৩৬ বছর |
এবি ব্যাংক | ৩১.৫৮ বছর |
রূপালি ব্যাংক | ৪৫.৯৪ বছর |
আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক | ৪৬.২৫ বছর |
আইসিবি ইসলামীক ব্যাংক | ফেরত পাওয়া যাবে না |
আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক থেকে বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পেতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগবে। কোম্পানিটির ব্যভসায় অস্বাভাবিক পতনে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাংকটি থেকে বিনিয়োগ ফেরত পেতে সময় লাগবে ৪৬ বছরেরও বেশি। এরপরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে রয়েছে রূপালি ব্যাংক। এ ব্যাংকটি থেকে বিনিয়োগ ফেরত পেতে ৪৬ বছর অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে ব্যাংকগুলোর মধ্যে লোকসানি আইসিবি ইসলামীক ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ ফেরত পাওয়া যাবে না।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল