করোনাভাইরাস আতঙ্ক শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জেঁকে বসেছে। তবে এ আতঙ্কের মধ্যেও গত সপ্তাহে বাজারের বিনিয়োগকারীরা প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ফিরে পেয়েছেন। তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার কারণে বিনিয়োগকারীরা এ অর্থ ফিরে পান। এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন সার্কিট ব্রেকার।
অব্যাহত দরপতনের হাত থেকে শেয়ারবাজারকে রক্ষা করতে গত ১৯ মার্চ নতুন সার্কিট ব্রেকার চালু করা হয়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন শুরু হবে শেষ পাঁচ কার্যদিবসের ক্লোজিং প্রাইসের গড় মূল্য দিয়ে। এর নিচে কোনো কোম্পানির শেয়ার দাম নামতে পারবে না। তবে দাম বাড়ার সীমা আগের মতোই থাকবে।
সার্কিট ব্রেকারের নতুন এ নিয়মের কারণে শেয়ারের দাম নির্দিষ্ট সীমার নিচে নামতে পারছে না। এরপরও গত সপ্তাহে লেনদেন অংশ নেয়া যে কয়কটি প্রতিষ্ঠানের দাম বেড়েছে, কমেছে তার থেকে বেশি। অবশ্য বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের দাম কমার পরও বেড়েছে বাজার মূলধনের পরিমাণ।
গত সপ্তাহজুড়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া ১৪০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯৬টির। আর ২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পরও সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার ২২৩ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ১০ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
এদিকে, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৩২ পয়েন্ট বা দশমিক ৮৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমে ১৫৫ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
বাকি দুটি সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ২৫ পয়েন্ট বা দশমিক ১৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমে ৩৮ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট বা ৪ শতাংশ।
আর ডিএসই-৩০ আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে ৫ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমে ৫৫ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
সূচক বাড়লেও ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের গতি। দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ২০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ২২১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৩১৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৯২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বা ২৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৮৮৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ১ হাজার ২৫৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৩৭০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বা ২৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
গত সপ্তাহের মোট লেনদেনের মধ্যে ‘এ’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের অবদান দাঁড়িয়েছে ৯৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এছাড়া ডিএসইর মোট লেনদেনে ‘বি’ গ্রুপের অবদান ৬ দশমিক ১২ শতাংশ। ‘জেড’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের অবদান দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং ‘এন’ গ্রুপের অবদান দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে মুন্নু সিরামিকের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪২ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা সপ্তাহজুড়ে হওয়া মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লিন্ডে বাংলাদেশের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৮৩ লাখ টাকার, যা সপ্তাহের মোট লেনদেনের ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ১৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল।
লেনদেনে এরপর রয়েছে- ওরিয়ন ফার্মা, রেনেটা লিমিটেড, লাফার্জাহোলসিম বাংলাদেশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, সাউথইস্ট ব্যাংক এবং সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যাল।
শেয়ারবার্তা / মিরন