1. [email protected] : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারবার্তা : nayan শেয়ারবার্তা
  3. [email protected] : news uploder : news uploder
রপ্তানি খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হবে
শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০৪ এএম

রপ্তানি খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হবে

  • আপডেট সময় : বুধবার, ২৫ মার্চ, ২০২০

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেওয়া হবে। এ তহবিলের অর্থ দিয়ে শুধু শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে গতকাল রাতে প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন।

ভাষণের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের স্বাধীনতা দিবস এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উদ্যাপিত হচ্ছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গোটা বিশ্ব এখন বিপর্যস্ত। এ ভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি এবং তাতে জনগণকে সাড়া দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতাকারী রাষ্ট্র ও জনগণ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ শুরু করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধনী বা দরিদ্র, উন্নত বা উন্নয়নশীল, ছোট বা বড়-সব দেশই আজ কম-বেশি নভেল করোনা নামের ভয়ংকর ভাইরাসে আক্রান্ত। আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশও এ সংক্রমণ থেকে মুক্ত নয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে আমরা এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ভিন্নভাবে উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জনসমাগম হয়Ñএমন ধরনের সব অনুষ্ঠানের আয়োজন থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।

জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ সব জেলায় শিশু সমাবেশ এরই মধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই কারণে আমরা মুজিববর্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জনসমাগম না করে টেলিভিশনের মাধ্যমে সম্প্রচার করেছি।

তিনি বলেন, আমরা জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। আমরা তাঁর ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দ্বারপ্রান্তে। বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ আজ খাদ্যশস্য, শাকসবজি, মাছ-মাংস-ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। ঢাকায় মেট্রোরেল এবং চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দোরগোড়ায় এখন আমরা। মহাকাশে আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপিত হয়েছে।

গত বছর আট দশমিক ১৫ শতাংশ হারে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চলতি বছর লক্ষ্য পূরণের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। এ মুহূর্তে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মানুষকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা। আমি সবার মানসিক অবস্থা বুঝতে পারছি। কিন্তু এই সংকটময় সময়ে আমাদের ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। এ ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উপদেশ আমাদের মেনে চলতে হবে। যতদূর সম্ভব মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে।

যারা করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশ থেকে স্বদেশে ফিরেছেন, সেসব প্রবাসী ভাইবোনের কাছে অনুরোধ, আপনাদের হোম কোয়ারেন্টাইন বা বাড়িতে সঙ্গ-নিরোধসহ যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে-সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন।

চীনে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, দুটি সমুদ্রবন্দর, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ও বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনসহ সব স্থলবন্দরের মাধ্যমে বিদেশফেরত যাত্রীদের স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। এ পর্যন্ত ছয় লাখ ৫৮ হাজার ৯৮১ যাত্রীর স্ক্রিনিং করা হয়েছে।

জানুয়ারি থেকেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে আমরা ব্যাপক কর্মসূচি ও প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ এবং দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য ঢাকায় ছয়টি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া আরও তিন হাসপাতাল প্রস্তুত করা হচ্ছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য পৃথক শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঢাকায় ১০ হাজার ৫০টিসহ সারা দেশে ১৪ হাজার ৫৬৫টি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সারা দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ২৯০টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এতে মোট ১৬ হাজার ৭৪১ জনকে সেবা দেওয়া যাবে।

গত ১৯ মার্চ থেকে বিদেশ থেকে আগত সব যাত্রীকে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বিমানবন্দর হতে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে স্বাস্থ্যকর্মীদেরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদের সুরক্ষায় পর্যাপ্ত সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে এবং যথেষ্ট সরঞ্জাম মজুত আছে। গতকাল পর্যন্ত ১৩ হাজার পরীক্ষা কিট মজুত ছিল। আরও ৩০ হাজার শিগগিরই দেশে পৌঁছাবে।

বেতার, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রসহ অন্যান্য সামাজিকমাধ্যমে করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত জনসচেতনতামূলক প্রচারণা জোরদার করা হয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। তবে কেউ গুজব ছড়াবেন না। গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশের সব স্কুল, কলেজ ও কোচিং সেন্টার ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা।

সব পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যে কোনো রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি-বেসরবারি অফিস বন্ধ থাকবে। কাঁচাবাজার, খাবার ও ওষুধের দোকান এবং হাসপাতালসহ জরুরি সেবা কার্যক্রম চালু থাকবে।

গতরাত থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন, নৌযান ও অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখবে। ২৪ মার্চ থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোয় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বলবৎ হয়েছে। এটি কার্যকর করতে জেলা প্রশাসনকে সেনাসদস্যরা সহায়তা করছেন। আপনারা যে যেখানে আছেন, সেখানেই অবস্থান করুন।

করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ৫০০ চিকিৎসকের তালিকা তৈরি করেছে, যারা জনগণকে সেবা দেবেন। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে গত ১৫ মার্চ সার্কভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে আমি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে যুক্ত হই। এ রোগের প্রাদুর্ভাব রোধে আঞ্চলিকভাবে সম্মিলিত প্রয়াস গ্রহণে আমি সার্কভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের উদাত্ত আহ্বান জানাই। সার্কভুক্ত দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়গুলো প্রস্তাবিত সুপারিশমালা বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করছে। আমরা একটি যৌথ তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাতে বাংলাদেশ ১৫ লাখ ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছে। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। নি¤œ আয়ের ব্যক্তিদের ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচির আওতায় নিজ নিজ গ্রামে সহায়তা দেওয়া হবে। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ছয় মাসের খাদ্য ও নগদ অর্থ দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভাষানচরে এক লাখ মানুষের থাকা ও কর্মসংস্থান উপযোগী আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে কেউ যেতে চাইলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।

বিনা মূল্যে ভিজিডি, ভিজিএফ ও ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। একইভাবে বিনা মূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবাও দেওয়া হচ্ছে। আমি নি¤œ আয়ের মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

আমাদের শিল্পোৎপাদন ও রপ্তানি বাণিজ্যে আঘাত আসতে পারে। এ আঘাত মোকাবিলায় আমরা কিছু আপৎকালীন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে ব্যবসাবান্ধব বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী জুন পর্যন্ত কোনো গ্রাহককে ঋণখেলাপি না করার ঘোষণা দিয়েছে।

রপ্তানি আয় আদায়ের সময়সীমা দুই মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাস করা হয়েছে। একইভাবে আমদানি ব্যয় মেটানোর সময়সীমা চার মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাস করা হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আর্থিক লেনদেনের সীমা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস বিল পরিশোধের সময়সীমা সারচার্জ বা জরিমানা ছাড়া জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এনজিওগুলোর ঋণের কিস্তি পরিশোধ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।

আমাদের এখন কৃচ্ছ তা সাধনের সময়। যতটুকু না হলে নয়, তার অতিরিক্ত কোনো ভোগ্যপণ্য কিনবেন না। মজুত করবেন না। সীমিত আয়ের মানুষকে কেনার সুযোগ দিন। আমরা খাদ্যোৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ বছর রোপা আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। সরকারি গুদামগুলোয় ১৭ লাখ টনের বেশি খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে।

এছাড়া, বেসরকারি মিল মালিকদের কাছে ও কৃষকের ঘরে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুত আছে। চলতি মৌসুমে আলু-পেঁয়াজ, মরিচ-গমের বাম্পার ফলন হয়েছে।

শেয়ারবার্তা / মিলন

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:

ভালো লাগলে শেয়ার করবেন...

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ