বাজারে এখন টার্নওভার ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা। এখন সূচক যদি চার হাজারেরও নিচে নেমে যায়, সেক্ষেত্রে আর কিছু বলার থাকবে না। অর্থাৎ, বাজার যে গতিতে রয়েছে, সে গতি অব্যাহত থাকলে অচিরেই ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়বে। অন্যদিকে বিদেশি বিনিয়োগকারী আরও কমে যাবে। তাই কালবিলম্ব না করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক প্রেসিডেন্ট সুলতান মাহমুদ ও এএফপির ব্যুরো চিফ শফিকুল আলম।
সুলতান মাহমুদ বলেন, আমাদের পুঁজিবাজার এক সময় সেকেন্ডারি মার্কেটনির্ভর ছিল। যে সময় বিনিয়োগকারীরা সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে অনেক লাভবান হয়েছেন। তখন বিনিয়োগকারীর কাছে সেকেন্ডারি মার্কেটই ছিল মুখ্য বিষয়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের এ বাজার থেকে যে আশা, প্রত্যাশা বা মুনাফা নেওয়ার প্রবণতা, সেটি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবার বাজারে এখন তারল্য সংকট তীব্র। বিনিয়োগকারীরা যদি বাজার থেকে কোনো মুনাফা না পান, সেক্ষেত্রে কীভাবে বাজার ভালো হবে। গত ১০ বছরে গুটিকয়েক বিনিয়োগকারী ছাড়া কোনো সাধারণ বিনিয়োগকারী লাভবান হতে পারেননি। এমনকি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। আবার গত কয়েক মাসে বিদেশি বিনিয়োগ অনেক কমে গেছে। তারা এখন নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে। বাজারকে গতিশীল করতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিএসইসি, ডিএসই, সিএসই ও এনবিআর প্রভৃতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি সম্মিলিত উদ্যোগ না নেয়, তাহলে বাজার গতিশীল করা যাবে না। বাজারে এখন টার্নওভার ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা। আবার সূচক যদি চার হাজারের নিচে নেমে যায়, সেক্ষেত্রে আর কিছু বলার থাকবে না। অর্থাৎ, বাজার যে গতিতে রয়েছে, সে গতি অব্যাহত থাকলে অচিরেই ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়বে। অন্যদিকে বিদেশি বিনিয়োগকারী আরও কমে যাবে। তাই এখন আর কালবিলম্ব না করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
তিনি আরও বলেন, বাজারের এ অবস্থায় বিগত বছরে যারা পুঁজিবাজারকে ভালোভাবে পরিচালনা করেছেন, তাদের পরামর্শক হিসেবে আনা যেতে পারে। অর্থাৎ, যারা পুঁজিবাজার সম্পর্কে ভালো বোঝেন, তাদের বোর্ডে নিয়ে আসুন বা তাদের নিয়ে একটি আলাদা পরামর্শক বোর্ড গঠন করা যেতে পারে।
শফিকুল আলম বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারের যে অবস্থা, এর মূল কারণ দুর্বল গভর্ন্যান্স, অর্থাৎ যারা পুঁজিবাজার পরিচালনা করেন, তাদের দুর্বলতা। গত দুই থেকে তিন বছর ধরে বাজার ধারাবাহিকভাবে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এখান থেকে কীভাবে বের হবেন? প্রধানমন্ত্রী অনেকবার বলেছেন বাজারকে ঠিক করেন। কিন্তু যারা বাজারকে ঠিক করবেন, তাদের মধ্যেই যদি গলদ থাকে, তাহলে বাজার কীভাবে স্থিতিশীল অবস্থানে আসবে। এখন বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের যে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে, এটি দূর করতে হলে একে অপরকে দোষারোপ বাদ দিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। সত্যিকার অর্থে, এ বাজার থেকে আমরা কী চাইÑসেটা বুঝতে হবে। বাজারে আরও বিনিয়োগকারীর সম্পৃক্ততা চাই। যদি সেটাই চাই, তাহলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে স্বচ্ছভাবে কাজ করতে হবে। গত রোববার সিপিডির এক সম্মেলন থেকে বলা হয়েছে, বাজারে এখনও সাত থেকে আট জায়গায় সমস্যা রয়েছে। আসলে বাজার উন্নয়নের স্বার্থে নিজেদের স্বার্থ ত্যাগ করে একত্রে বসা উচিত।
শেয়ারবার্তা / ৬ নভেম্বর ২০১৯